logo

সময়: ০১:৩০, সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪

২৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ০১:৩০ অপরাহ্ন

সর্বশেষ খবর

খুটির জোর কোথায়?  সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাচন অফিস, ঘুষ ছাড়া কাজই হয়না

Ekattor Shadhinota
০৭ আগস্ট, ২০২২ | সময়ঃ ১০:২৮
photo
খুটির জোর কোথায়?  সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাচন অফিস, ঘুষ ছাড়া কাজই হয়না

সোনাইমুড়ী (নোয়াখালী) প্রতিনিধিঃ নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাচন অফিসে ঘুষ বাণিজ্য ওপেন সিক্রেট হয়ে দাড়িয়েছে। এখানে ঘুষ ছাড়া কোন কাজই হয়না। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন এ কর্মকর্তার খুটির জোর কোথায়!e

 

ভােটার তালিকায় নাম উঠানো, সংশােধন ও স্থান পরিবর্তনসহ সব কাজে ঘুষ না দিলে মাসের পর মাস ঘুরতে হয় অফিসের বারান্দায়। এতে ভােগান্তিতে এ উপজেলায় হাজারো সেবা প্রার্থীরা। ভুক্তভােগীরা বিষয়টিকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষসহ দুর্নীতি দমন কমিশনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

 

অভিযােগসূত্রে জানা যায়, উপজেলা নির্বাচন অফিসার অনলাইনে এনআইডির ভেরিফিকেশন কপি নেওয়ার জন্য ফি তালিকায় ১১৫ টাকা লেখা থাকলেও তিনি  নিচ্ছেন ২০০ টাকা। ভােটার স্থানান্তরে সরকারি কোন ফি না থাকলেও ২৩০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। এনআইডি কার্ডের কোন প্রকার ভূল সংশােধন করতে হলে ক্যাটাগরি অনুযায়ী  ২ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয়। তবে অনলাইন কপি আনতে গেলে অফিস সহকারী ২শ টাকা নিয়ে আবার শিখিয়ে দিচ্ছেন কেউ জানতে চাইলে বলবেন ১১৫ টাকা নিয়েছে। বিদেশ যাত্রীদের আইডি কিংবা পাসপোর্ট সংক্রান্ত জটিলতা হলেতো কথাই নেই, তখন ঘুষের অংক ৫০ হাজার থেকে লক্ষ টাকা ছাড়িয়ে যায়। কেউ কেউ প্রয়োজনের তাগিদে অসহায় আত্মসমর্পণ করছেন এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার কাছে।

 

এভাবে উপজেলার সেবা প্রার্থীরা প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছে। তবে অনলাইন কপি সংগ্রহ করতে গেলে যেখানে ব্যাংক স্লিপ নিয়ে যাওয়ার কথা, সেখানে অফিস সহকারী নগদ টাকার বিনিময়ে করিয়ে দিচ্ছেন। এতে সরকার অনেক রাজস্ব হারাচ্ছে বলে জানান সচেতন মহল।

অনুসন্ধানে জানা যায়, জনৈক সেবাপ্রার্থী হেলাল উদ্দিন জানান, তিনি একটি এনআইডির নামের আক্ষরিক ভূল সংশোধনের জন্য আবেদন করলে নির্বাচন কর্মকর্তা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে কাল ক্ষেপণ করেন। পরে নির্বাচন কর্মকর্তার উপস্থিতিতে তার সহকারী শাকিলের মাধ্যমে ৩ হাজার টাকা দিলে এনআইডি সংশোধন করে দেয়। এভাবে এ অফিসে বিগত ২বছর থেকে নানা অজুহাতে সেবা প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শেখ ফরিদ ও তার সহযোগীরা।

 

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ভুক্তভোগী মিজান, রাজু, ইয়াছিন আরাফাত, ইস্রাফিলসহ একাধিক ব্যাক্তি জানান, টাকা ছাড়া এখানে কোন প্রকার সেবা নেওয়া সম্ভব নয়। প্রতিনিয়ত নির্বাচন অফিসের সামনে ঘুষের টাকা নিয়ে ভুক্তভােগী ও অফিসের লােকজনের মাঝে হট্টগােল লেগে থাকে। তারা আরও বলেন, এনআইডির অনলাইন কপি সংগ্রহ করতে গেলে তাদের ধার্য ২০০ টাকা করে দিতে হয়। একটু কম দিতে চাইলে কাজ হয়না। এছাড়াও নতুন এনআইডি করতে গেলে ১৫ শত থেকে ২ হাজার টাকা দিতে হয়। কোন ব্যক্তি তার জাতীয় পরিচয় পত্রের আক্ষরিক ভূল সংশােধন করতে গেলে অফিস সহকারী বলে দিচ্ছেন ৫/৬ মাস সময় লাগবে, তার আগে হবেনা। ভুক্তভােগী সাজিদ খান পিতার নামের ভুল সংশােধন করতে গেলে তার কাছে ২০ হাজার টাকা দাবী করে বলে জানা যায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ভুক্তভোগী জানান, এখানে তাদের নির্দিষ্ট ৪/৫জন দালাল রয়েছে, তাদের মাধ্যমে চাহিদা মোতাবেক টাকা দিলে কাজ করতে অসুবিধা হয়না। তিনি আরও জানান, বিগত ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও মেম্বার প্রার্থীদের নমিনেশন ফরম দাখিলের সময় এনআইডি'র নেটকপি বাধ্যতামুলক জমা দিতে হবে বলে প্রায় সাড়ে ৬শতাধিক প্রার্থীর প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫শ টাকা করে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। সে সময় অফিস খরচের কথা বলেও প্রার্থীদের কাছ থেকে আরও ৫শ ১হাজার টাকা করে আরও কয়েক লক্ষ টাকা নিয়ে ছিলেন এই অসাধু কর্মকর্তা ও তার সহযোগীরা।

 

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাচন অফিসারের সহকারী শাকিল এর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনলাইন কপির ফি ১১৫ টাকা করে রাখা হয়। অন্য কাউকে বেশি দিয়ে থাকলে তা আমি জানিনা। ভূল সংশােধনের জন্য টাকা নেওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে বলেন, অফিস আমার কথায় চলেনা, স্যারের কথায় চলে। এ ব্যাপারে আমার কিছু বলার নাই। 

নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, ইতিপূর্বে গণমাধ্যমে ঘুষের টাকা ও অনিয়মের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে উল্টো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে বিরূপ মন্তব্য করেন নির্বাচন কর্মকর্তা শেখ ফরিদ।

তিনি বলেন, অফিস চলবে আমার কথায়, এখানে কারও কিছু করার নেই। এই কর্মকর্তার খুটির জোর কোথায় এমন প্রশ্ন অনেকের। বিগত ৪/৫ মাস থেকে অফিসের বাহিরে সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে দেওয়া হয়। অফিসের সামনে কে আসছে না আসছে তা ভিতর থেকে পর্যবেক্ষণ করা হয়। অফিস চলাকালীন সময় অফিসের মূল ফটক বন্ধ রেখে ভিন্ন ফটক দিয়ে ভিতরে ঢুকিয়ে চলে ঘুষ লেনদেন। কোন কোন সময় এই লেনদেনের দরবার রাত ১০টা ১১টা পর্যন্ত চলে।

 

এ বিষয় উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ শেখ ফরিদ তার অফিসে গেলে বলেন, আমেরিকায় যেতে ২৫ লক্ষ টাকা ব্যয় করতে পারে, তাদের কাগজপত্র সংশোধন করতে এলে আমাকে দেয় ২/৫ হাজার টাকা। এটাকি কোন কথা হলো? 

জেলা নির্বাচন অফিসার মেজবাহ উদ্দিন মুঠোফোনে বলেন, অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

শেয়ার করুন...

আরও পড়ুন...

ফেসবুকে আমরা…