logo

সময়: ০৪:২২, শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪

২০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ০৪:২২ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ খবর

সন্ত্রাসী সংগঠন আরসা’র মোস্ট ওয়ান্টেড কিলার গ্রুপের প্রধান নুর কামাল প্রকাশ সমিউদ্দন’কে দেশী-বিদেশি অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১৫।

Ekattor Shadhinota
১৬ অক্টোবর, ২০২৩ | সময়ঃ ১০:২৫
photo
সন্ত্রাসী সংগঠন আরসা’র মোস্ট ওয়ান্টেড কিলার গ্রুপের প্রধান নুর কামাল প্রকাশ সমিউদ্দন’কে দেশী-বিদেশি অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১৫।

বিগত সময়ে কক্সবাজারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মায়ানমার নাগরিকদের শরণার্থী শিবির ও পাশর্^বর্তী এলাকাসমূহে খুন, অপহরণ, ডাকাতি, মাদক, চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্রিক কোন্দলসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যকলাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, শরণার্থী শিবির ও এর সংলগ্ন গহীন পার্বত্য এলাকাসমূহে ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি’ (আরসা)’সহ বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপ এ সকল খুন, অপহরণ, ডাকাতি, মাদক, চাঁদাবাজিসহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করছে; যার কারণে শরণার্থী শিবির ও স্থানীয় এলাকাবাসী সবসময় ভীত সন্ত্রস্ত থাকে।

photo

এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির ও পাশর্^বর্তী এলাকায় বেশ কয়েকটি হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়। ইতোপূর্বে এই বছরে কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আরসা’র শীর্ষ সন্ত্রাসী ও সামরিক কমান্ডার,ক্যাম্প কমান্ডারসহ সর্বমোট ৭২ জন আরসার সক্রিয় সদস্যদের গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। ইতোপূর্বে বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতারকৃতদের নিকট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব এ সকল সন্ত্রাসী গ্রুপের শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারের লক্ষে গোয়েন্দা নজরদারী চলমান রাখে।

     গতরাতের‌্যাব-১৫ এর একটি আভিযানিক দল কক্সবাজারের কুতুপালং এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেআলোচিত রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মহিবুল্লাহ হত্যাকান্ডের সমন্বয়কারী ও হত্যাকারী এবং গোয়েন্দা সংস্থা’র কর্মকর্তা হত্যাকান্ডে সরাসরি অংশগ্রহণকারী এবং সন্ত্রাসী সংগঠন আরসা’র মোস্ট ওয়ান্টেড কিলার গ্রুপের প্রধান 
নুর কামাল প্রকাশ সমিউদ্দিন (৪১), পিতাঃ সাবের আহাম্মদকে গ্রেফতার করে। উদ্ধার করা হয়০১টি বিদেশী পিস্তল,০৪টি এলজি, ০২টি ওয়ান শুটার গান, ০৩ রাউন্ড এসএমজি’র গুলি, ০১ রাউন্ড নাইন এমএম গুলি এবং ০৯টি ১২ বোর কার্তুজ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত সন্ত্রাসী সংগঠন ‘আরসা’র সাথে সংশ্লিষ্ট থেকে খুন ও অপহরণসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত থাকার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে।

    প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত সমিউদ্দিন জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মায়ানমারের নাগরিক। সে ২০১৬ সালে মায়ানমারে অবস্থানকালীন সময়েই আরসার কমান্ডার আব্দুল হালিম, মাস্টার নুরুল বশর ও আবু আনাস এর মাধ্যমে আরসায় যোগদান করে এবং মায়ানমারে আরসার হয়ে ০১ বছর বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। অতঃপর ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশে প্রবেশ করে শরণার্থী ক্যাম্প-৭ এ বসবাস শুরু করে। ২০১৮ সালের দিকে সে আরসার কমান্ডার মুফতি জিয়াউর রহমান এর সাথে সাক্ষাতের মাধ্যমে পুনরায় আরসার নতুন করে সদস্য সংগ্রহ, লোকবল বৃদ্ধিসহ সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করে। পর্যায়ক্রমে সে ৭নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আরসার ব্লক জিম্মাদার, হেড জিম্মাদার এবং সর্বশেষ ক্যাম্প কমান্ডার হিসেবে নেতৃত্ব লাভ করে।সে আরসা প্রধান আতাউল্লাহ এর নির্দেশে আরসার ভয়ংকর ও সক্রিয় সদস্যদের নিয়ে ২০ জনের একটি গান গ্রুপ তৈরি করে যা ‘কিলার গ্রুপ’ নামে পরিচিত। উক্ত কিলার গ্রুপের প্রধান হিসেবে সে নিজে দায়িত্ব পালন করতো।এই গ্রুপটি বিভিন্ন সময়ে টার্গেট কিলিং সম্পন্ন করার পাশাপাশি তাদের কথামতো কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ভিকটিমকে অপহরণপূর্বক শারীরিক ও পাশবিক নির্যাতনসহ মুক্তিপণ আদায় করত। মুক্তিপণ না পেলে তার নেতৃত্বে কিলিং মিশন সম্পন্ন করতো এবং ভিকটিমকে খুন করে গহীন পাহাড়ে অথবা জঙ্গলে লাশ গুম করতো বলে জানা যায়। এছাড়াও তার নেতৃত্বে ‘আরসা’র কিলিং গ্রুপের সদস্যরা রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে হত্যা, হামলা, ভয় ভীতি প্রদর্শন, অরাজকতা ও আতঙ্ক সৃষ্টিসহ খুন, অপহরণ, ডাকাতি, মাদক, চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করে থাকে।সে ক্যাম্প-১, ২, ৬ ও ৭ এর আরসার ‘গান গ্রুপ’কমান্ডার হিসেবেওনেতৃত্ব প্রদান করতো। তার নেতৃত্বে নগদ অর্থের বিনিময়ে অস্ত্র ও গোলাবারুদ ক্রয় করা হতো।তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য তার নেতৃতে আরসার প্রধান আতাউল্লাহ এর নির্দেশে পাশ^বর্তী দেশ হতে দূর্গম সীমান্তবর্তী অঞ্চল দিয়ে অস্ত্র ও গোলাবারুদ চোরাচালান করতো বলে জানা যায়। এছাড়াও অস্ত্র ও গোলাবারুদ এনে গ্রেফতারকৃত সমিউদ্দিন কিলার গ্রুপের সদস্য ও আরসার অন্যান্য সন্ত্রাসীদের মাঝে সরবরাহ করতো বলে জানা যায়।তাদের অত্যাচারে শরণার্থী শিবিরের শরণার্থীরা সবসময় ভীত সন্ত্রস্ত থাকতো। কেউ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে তারা তাকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করতো বা অপহরণের পর লাশ গুম করতো বলে জানা যায়। 

    সূত্রে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত সমিউদ্দিনমায়ানমারে থাকাকালীন সময়েও বিভিন্ন হত্যা, হামলা, অস্ত্র লুটপাট, সহিংসতাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। সে মায়ানমারে থাকাকালীন২০১৬ সালে আরসার হয়ে বিজিপি (মায়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ)ঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে বেশকিছু অস্ত্র লুট করে এবং বেশ কয়েকজনকে হত্যা করে। 

    বিভিন্ন সূত্রেআরও জানা যায় যে,আরসার প্রধান আতাউল্লাহ’র নির্দেশে গ্রেফতারকৃত সমিউদ্দিন ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরেরোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মহিবুল্লাহ হত্যাকান্ডের সমন্বয় করে ও সরাসরিঅংশগ্রহণ করে।গ্রেফতারকৃত সমিউদ্দিন’সহ প্রায় ১২ জনের একটি দল দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে মাস্টার মহিবুল্লাহ’র অফিসে প্রবেশ করে মহিবুল্লাহ’কে গুলি করে হত্যা করে বলে জানা যায়। পরবর্তী তারা সেখান থেকে আত্মগোপনে চলে যায়। এছাড়া২০২২ সালের নভেম্বরে গোয়েন্দা সংস্থা ও র‌্যাবের মাদকবিরোধী যৌথ অভিযানের সময় সন্ত্রাসীদের হামলায় গোয়েন্দা সংস্থার একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিহত হন। উক্ত সন্ত্রাসী হামলায় একজন র‌্যাব সদস্য গুরুত্বর আহত হন। উক্ত হত্যাকান্ডের সাথে সেও সরাসরি জড়িত ছিল বলে জানা যায়।

    গ্রেফতারকৃত সমিউদ্দিনহেড মাঝি শফিক হত্যাকান্ড, জসিম হত্যাকান্ড, সেলিম হত্যাকান্ড, নূর বশর হত্যাকান্ড, সালাম হত্যাকান্ড, সলিম হত্যাকান্ড,কালা বদ্দা হত্যাকান্ড, রহিমুল্লাহ ও খালেদ হত্যাকান্ডে জড়িত ছিল। এছাড়াও,রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আলোচিত ০৬ জন হত্যাকান্ডসহবিভিন্ন হত্যাকান্ডে জড়িত ছিল বলে জানা যায়।এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর টহল দলের উপর সশস্ত্র হামলার সাথে সে জড়িত রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে অপহরণ/টার্গেট কিলিং শেষে কক্সবাজারের গহীন পার্বত্য এলাকায় আত্মগোপনে থাকতো বলে জানা যায়। তার বিরুদ্ধে উখিয়া, নাইক্ষ্যংছড়িসহ বিভিন্ন থানায় হত্যা, অপহরণ ও অস্ত্রসহ বিভিন্ন অপরাধে প্রায়১৫টি মামলা রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা যায়।

   গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
 

শেয়ার করুন...

আরও পড়ুন...

ফেসবুকে আমরা…