logo

সময়: ১২:৪০, শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪

১৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২:৪০ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ খবর

একই পরিবারের ০৩ জন’কে নৃশংসভাবে গলা কেটে হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকান্ডের মূলহোতা সাগর আলী ও তার স্ত্রী ইশিতা বেগম’কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৪।

Ekattor Shadhinota
০৩ অক্টোবর, ২০২৩ | সময়ঃ ১০:৪৮
photo
একই পরিবারের ০৩ জন’কে নৃশংসভাবে গলা কেটে হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকান্ডের মূলহোতা সাগর আলী ও তার স্ত্রী ইশিতা বেগম’কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৪।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখ সাভারের আশুলিয়া জামগড়াএলাকায়বহুতল ভবনের ৪র্থ তলার একটি ফ্ল্যাট থেকেদুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে ভবনের অন্যান্য ভাড়াটিয়ারাবিষয়টি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অবগত করে। পরবর্তীতেউক্ত ফ্ল্যাট থেকে স্বামী, স্ত্রী ও তাদের১২ বছরের সন্তানের অর্ধগলিত গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

photo

নৃশংস এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় ভিকটিমের ভাই বাদী হয়েআশুলিয়া থানায়অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটিহত্যা মামলা দায়ের করেন; যার মামলা নম্বর নং-০৪/৭১৬, তারিখ ০১ অক্টোবর ২০২৩। একই পরিবারের ০৩ জনের হত্যাকান্ডের ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত হলে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচিত হয়। র‌্যাব উক্ত হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য গোয়েন্দা নজদারী বৃদ্ধি করে।

 গত রাতে র‌্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-০৪ এর একটিআভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গাজীপুরের শফিপুরএলাকায় অভিযান পরিচালনা করে উক্ত হত্যাকান্ডেরমূল হোতা ১। মোঃ সাগর আলী (৩১) পিতাঃ মোবারক @মোগবর আলী, টাংগাইল ও তার অন্যতম সহযোগী (স্ত্রী) ২। ঈশিতা বেগম (২৫) স্বামীঃ মোঃ সাগর আলী, দেওয়ানগঞ্জ, জামালপুরদের’কেগ্রেফতার করে র‌্যাব। উদ্ধার করা হয় হত্যাাকান্ডের সময় ভিকটিম মোক্তার হতে লুটকৃত আংটি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে গ্রেফতারকৃতরাএই হত্যাকান্ডেরবিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে।

    প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে,গ্রেফতারকৃতরা প্রথমে অর্থের লোভে ও পরবর্তীতে কাক্সিক্ষত অর্থ না পেয়ে ক্ষোভ থেকে উক্ত হত্যাকান্ডটি সংঘটিত করে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখগ্রেফতারকৃত সাগর সাভার বারইপাড়া এলাকার একটা চায়ের দোকানে চা খাওয়ার সময় ভিকটিম মোক্তারকেপাশর্^বর্তী একটি কবিরাজি ও ভেষজ ঔষধের দোকানে তার শারীরিক সমস্যারবিষয়েচিকিৎসা নিয়ে কথা বলতে দেখে।গ্রেফতারকৃত সাগর জানতে পারে ভিকটিম মোক্তার ঐ দোকানে ভেষজ ও কবিরাজি চিকিৎসা বাবদ ১৫-২০ হাজার টাকা খরচ করেও কোন ফলাফল পায়নি।গ্রেফতারকৃত সাগরকৌশলে ভিকটিম মোক্তারকে ডেকে নিয়ে আসে এবং ভিকটিমের সাথে কথাবার্তায় জানতে পারে যে, ভিকটিম মোক্তারের ভেষজ ও কবিরাজি চিকিৎসার প্রতি আগ্রহ ও আস্থা রয়েছে। ভিকটিম মোক্তার তার ও তার পরিবারের বেশ কিছু শারীরিক সমস্যার কথাও গ্রেফতারকৃত সাগরকে জানায়। গ্রেফতারকৃত সাগর জানায় যে, তার স্ত্রী একজন ভালো কবিরাজ এবং সে তার সমস্যার সমাধান করে দিবে বলে মিথ্যা আশ^াস প্রদান করে।কথাবার্তার এক পর্যায়ে গ্রেফতারকৃত সাগর উক্ত চিকিৎসার জন্য ভিকটিম মোক্তারের সাথে ৯০০০০/- (নব্বই হাজার) টাকারচুক্তিকরে। গ্রেফতারকৃত সাগর ও তার স্ত্রী ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখ সকালে ঔষধসহ তার বাসায় গিয়ে চিকিৎসা করবে বলে জানায়। গ্রেফতারকৃত সাগরের সাথে যোগাযোগের জন্য ভিকটিম মোক্তার মোবাইল নাম্বার চাইলে গ্রেফতারকৃত সাগর তার আত্নীয়রে মোবাইল নাম্বার প্রদান করে। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত সাগর বাসায় গিয়ে তার স্ত্রীকে উক্ত বিষয়ে জানায় এবং তার স্ত্রী নগদ বিপুল অংকের টাকার কথা শুনে রাজি হয়। তারা পরিকল্পনা করে ভুক্তভোগী মোক্তারের বাসায় গিয়ে ভেষজ ও কবিরাজি চিকিৎসার কথা বলে তার পরিবারের সবাইকেঘুমের ঔষধ খাইয়ে তাদের অর্থসহ মূল্যবান সামগ্রী লুট করবে। উক্ত পরিকল্পনা মোতাবেক গ্রেফতারকৃত সাগর গাজীপুরের মৌচাক এলাকার একটি ফার্মেসি থেকে ১ বক্স (৫০টি) ঘুমের ঔষধ ক্রয় করে। 

    জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায় যে, পরবর্তীতে গত ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখ রাতে গ্রেফতারকৃত সাগরের সাথে তার আত্নীয়ের মোবাইল ফোনে কথা বলে শর্ত মোতাবেক চিকিৎসার পরবর্তীতে ৯০,০০০ হাজার টাকা প্রদানের ব্যাপারে ভিকটিম মোক্তার আশ^াস প্রদান করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখ সকালেগ্রেফতারকৃত সাগর ও তার স্ত্রী গাজীপুরের মৌচাক থেকে ভিকটিম মোক্তারের বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় এবং জামগড়া মোড়ে ভিকটিম এর সাথে দেখা করে ভিকটিমের সাথে তার বাসায় যায়। ভুক্তভোগীর বাসায় গিয়ে তার পরিবারের সাথে প্রাথমিক পরিচয়ের পর গ্রেফতারকৃত সাগরের স্ত্রী ঈশিতা তাদের সমস্যার কথা শুনে এবং ইসবগুলের শরবতের সাথে চেতনানাশক ঔষধমিশিয়ে তাদেরকে ভেষজ ও কবিরাজি চিকিৎসার ঔষধ বলে খাওয়ায়। পরবর্তীতেভিকটিম মোক্তার,তার স্ত্রী ও তার ছেলে ঘুমের ঔষধের প্রভাবে ঘুমিয়ে পড়লে গ্রেফতারকৃত সাগর ও তার স্ত্রী মিলে প্রথমে মোক্তারের কক্ষে গিয়ে মোক্তারের হাত ও পা বাধে,পরবর্তীতে মোক্তারের স্ত্রীর হাত-পা বাধে। পরবর্তীতে তারা ভিকটিম মোক্তারের মানিব্যাগ,তার স্ত্রীর পার্স ও বাসার অন্যান্য স্থানে অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রীর জন্য তল্লাশি করে মাত্র ৫০০০ টাকা পায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গ্রেফতাকৃতরাবটি দিয়ে প্রথমে ভিকটিম মোক্তারের গলায় উপর্যপুরি কোপ দিয়ে হত্যা করে। পরবর্তীতে অন্য কক্ষে গিয়ে গ্রেফতারকৃতরা ভিকটিমের ছেলেও স্ত্রীকে একই বটি দিয়ে পর্যায়ক্রমে কুপিয়ে হত্যা করে।গ্রেফতারকৃতরা তাদের সকলের মৃত্যু নিশ্চিত করেভিকটিম মোক্তারের হাতে থাকা আংটিটি নিয়েযায়।পরবর্তীতে তারা উভয়ে ভিন্নপথে রিকশাযোগেগাজীপুরের মৌচাকে তার শ্বশুরবাড়ি(ভাড়া বাসায়) আসে এবং সেখানেই অবস্থান করতে থাকে। উক্ত হত্যাকান্ডের ঘটনাটি মিডিয়া ও আশেপাশের এলাকায় ব্যাপকভাবে প্রচার হলে তারা দুজন একসাথে আত্মগোপনে চলে যায়। পরবর্তীতে আত্মগোপনে থাকাকালীন গাজীপুরেরশফিপুর এলাকাথেকে র‌্যাব কর্তৃক গ্রেফতারহয়।

    স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভিকটিমমোক্তার হোসেন ও তার স্ত্রী সাহিদা বেগম আশুলিয়ার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। তার সন্তান মেহেদী হাসান জয় স্থানীয় একটি স্কুলে ৭ম শ্রেনিতে পড়াশোনা করতো। ভিকটিম মোক্তার ও তার স্ত্রী চাকুরীর উদ্দেশ্যে সন্তানসহ বেশকিছু দিন ঠাকুরগাঁও হতে সাভারের আশুলিয়া এলাকায় এসে বসবাস শুরু করেন বলে জানা যায়। 

    গ্রেফতারকৃত সাগর মাদকাসক্ত ছিল এবংসে বিভিন্ন পেশার আড়ালে চুরি ও ছিনতাই করতো বলে জানা যায়। ইতোপূর্বে সে ২০২০ সালে টাঙ্গাইলের মধুপুরে ২০০ টাকার জন্য একই পরিবারের ০৪ জনকে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়েএকই কায়দায় গলাকেটে হত্যা করে। উক্ত হত্যাকান্ডের ঘটনায় সের‌্যাব-১২ কর্তৃক গ্রেফতার হয়। পরবর্তীতে সে প্রায় সাড়ে ৩ বছর কারাভোগ করে ২০২৩ সালেরজুন মাসেজামিন পেয়ে গাজীপুরের মৌচাক এলাকায় তার শ^শুরের ভাড়াবাসায়কিছু দিন অবস্থান করে। দীর্ঘদিন জেলহাজতে থাকায় তার আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় সে রাজমিস্ত্রি, কৃষি শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশার আড়ালে ঢাকা, সিলেট ওটাঙ্গাইলে অবস্থান করে এবং সুযোগ বুঝে চুরি ও ছিনতাই করতো বলে জানা যায়। সে একটি জেলায় বেশকিছু দিন অবস্থানের পর স্থান পরিবর্তন করে অন্য জেলায় গমন করতো। এছাড়াও সে অবৈধ পথে প¦ার্শবর্তী দেশেজুলাই মাসে গমন করে ২০-২৫ দিন অবস্থান করে এবং আগস্ট মাসে দেশে ফিরে এসে কুমিল্লায় কিছুদিন অবস্থান করে। পরবর্তীতে গত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখ গাজীপুরের মৌচাক এলাকায় তার শ্বশুরবাড়িতে (ভাড়া বাসায়) আসে বলে জানা যায়। 

    গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। 
 

শেয়ার করুন...

আরও পড়ুন...

ফেসবুকে আমরা…