ঢাকা ১৫ আগস্ট:
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জনাব মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, দেশি-বিদেশি প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার স্বপ্নকেই হত্যা করা নয়,তারা বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে হত্যা করতে চেয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার দীর্ঘ ২১ বছর পর্যন্ত জাতির পিতার রক্তের উত্তরাধিকারী শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক লড়াই করতে হয়েছে।
তার প্রজ্ঞাবান গতিশীল নেতৃত্বের কাছে ষড়যন্ত্রকারিদের উদ্দেশ্য সফল হয়নি। তার শাসনকালের সাড়ে উনিশ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশকে পৌঁছে দিয়েছেন। মন্ত্রী বলেন, সুখী – সমৃদ্ধ সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে চূড়ান্ত বিজয়ে রূপান্তরের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে। এই জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান মন্ত্রী।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী আজ ঢাকায় জিপিও মিলনায়তনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদত বার্ষিকীতে জাতীয় শোক দিবস পালন উপলক্ষ্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ আয়োজিত আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু গবেষক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী সাজ্জাদ আলী জহির (অব.) বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ এবং ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো: হারুনুর রশিদ বক্তৃতা করেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকে বাঙালি জাতি রাষ্ট্রের পিতা উল্লেখ করে বলেন, পৃথিবীর বহু দেশ, বহু জাতি দাসত্ব ও পরাধীনতার শেকল পরে আছে এবং তারা যুদ্ধ করে যাচ্ছে বছরের পর বছর, কিন্তু বিজয়ের মুখ দেখছে না, স্বাধীনতার সুখ তারা পাচ্ছে না। কারণ তাদের একজন বঙ্গবন্ধু নাই।
আমাদের একজন বঙ্গবন্ধু ছিলেন বলেই হাজার বছরের পরাধীন এ জাতি স্বাধীন জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পেরেছে। পৃথিবীতে বঙ্গবন্ধুর সাথে তুলনা করার মতো জাতি রাষ্ট্রের পিতা পাওয়া কঠিন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পথ ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে বিশ্বে এক অনন্য উচ্চতায় উপনীত করেছেন। এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ উন্নত বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবেই। ৭০ এর দশকের শুরুতে স্বাধীনতার প্রাক্কালে মন্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের ছাত্র হিসেবে তাঁর দেখা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠিনী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চালচলনকে চিরায়ত বাংলার অতি সাধারণ একজন মানুষের সাথে তুলনা করে বলেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা হওয়া সত্ত্বেও নিজ বিভাগের শিক্ষকদের অনেকেই জানতেন না তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। তিনিও নিজের পরিচয় কখনো প্রকাশ করতেন না যে তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। এটাই ছিলো সন্তানদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা।
তিনি বলেন ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন সম্পন্ন হয়েছে। আমাদের নতুন লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর সুখী -সমৃদ্ধ স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’ গড়ার চুড়ান্ত পদক্ষেপ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতৃত্ব ছাড়া স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। তিনি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার চলমান সংগ্রাম এগিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য দেশ প্রেমিক প্রতিটি মানুষকে সম্মিলিত উদ্যোগে কাজ করে যেতে হবে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব বলেন, বঙ্গবন্ধুর চেতনায় উজ্জ্বীবিত হয়ে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে। তিনি নতুন প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, একটি জ্ঞানভিত্তিক ডিজিটাল সাম্য সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর লালিত স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে হবে।
কাজী সাজ্জাদ জহির তার গবেষণালব্ধ বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপনা করেন। তিনি পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ঘটা লোমহর্ষক কয়েকটি ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভূট্রো একাত্তরের রণাঙ্গণ থেকে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের জন্য একটি চিঠিতে স্বাক্ষরের জন্য চাপ প্রয়োগ করেও বঙ্গবন্ধুকে তার মানুষদের প্রতি তার প্রতিশ্রুতি থেকে বিচ্যুৎ করতে পারেননি। বঙ্গবন্ধু ছিলেন নীতি ও আদর্শে অবিচল একজন মহান নেতা। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে কারাগারে সামরিক ট্রাইব্যুনালে প্রদত্ত রায় অনুযায়ী ফাঁসি প্রদানের আয়োজন চূড়ান্ত করা হয়েছিল। তার কবর খনন করা হয়েছিল। তাতেও বঙ্গবন্ধু বিচলিত হননি। সে সময় জার্মানসহ বিভিন্ন দেশ বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু দন্ডাদেশ স্থগিত করতে টেলিগ্রাম বার্তা পাঠায় বলে জানান সাজ্জাদ জহির। তিনি বলেন, ভূট্টো এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী কিংবা রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণের প্রস্তাব দেন্ এবং মুক্তির পর বঙ্গবন্ধুর হাত খরচা হিসেবে তাকে পঞ্চাশ হাজার ডলারের একটি উপহার বক্স অফার করেন। কিন্তু জাতির পিতাকে ভুট্টো সাহেবের কোন প্রস্তাবই রাজি করাতে কাজ করেনি। জাতির পিতা বাঙালির স্বার্থ বিরোধী কোন কিছুই করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন । এমনকি এতে যদি তার মৃত্যু হয় তাও তিনি হাসি মূখে বরণ করবেন বলে জানান । সাজ্জাদ জহির বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী ডালিমকে পৃথিবীর ইতিহাসে জঘন্যতম একজন বিশ্বাস ঘাতক আখ্যায়িত করে বলেন, ডালিম বঙ্গবন্ধুর বিশেষ অনুকম্পায় লন্ডনের উন্নত একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ্য হয়। বঙ্গবন্ধু নিজের পকেট থেকে তাকে চিকিৎসার অর্থ প্রদান করেন। শুধু তাই নয় চিকিৎসার জন্য ডালিমের পুলিশ অফিসার শ্বশুরকে লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে কাউন্সিলর পদে প্রেষণে নিয়োগ প্রদান করেন। অথচ ডালিম এর প্রতিদানে যা করেছে তা বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাসে নজিরবিহীন। মীরজাফর কিছুই না ডালিমের বিশ্বাসঘাতকতার কাছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এর আগে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুকে জেল খানায় হত্যার ষড়যন্ত্রও সফল হয়নি। বঙ্গবন্ধুকে গোপনে সতর্ক করার জন্য একজন পাকিস্তানী ক্যাপটেনকে জীবন হারাতে হয়েছে জানালেন সাজ্জাদ জহির।এর আগে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জনাব মোস্তাফা জব্বার এবং সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান এর নেতৃত্বে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ও এর অধীন দপ্তর ও সংস্থা সমূহের পক্ষ থেকে ধানমণ্ডীতে বঙ্গবন্ধু ভবনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন।