Masud Rana
মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী: রাজশাহীর তানোরে
ব্যক্তিমালিকানাধীন অবৈধ সেচ পাম্পের পরিত্যক্ত বোরিং (গর্ত)
থেকে প্রায় ৪৫ ফুট মাটির গভীর থেকে উদ্ধারের পরও বাঁচানো
গেল না দুই বছরের শিশু সাজিদকে। টানা প্রায় ৩৩ ঘণ্টা রুদ্ধশ্বাস
উদ্ধার অভিযান শেষে বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) রাত ৯টা ১০
মিনিটে তাকে উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।
পরে দ্রুত
তানোর উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা
শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক
(অপারেশুনমেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী রাতে
সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
বুধবার দুপুরে হারিয়ে যাওয়ার পর থেকেই সাজিদকে উদ্ধারের
সংবাদে কোয়েলহাট পূর্বপাড়া গ্রামসহ আশপাশের এলাকা
থেকে শত শত মানুষ ভিড় জমান। কেউ কেঁদেছেন, কেউ দোয়া
করেছেন, কেউ প্রার্থনা করেছেন। নাটোর, নওগাঁ,
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীর বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ ছুটে
আসেন তার খোঁজ পেতে।
সাজিদের বাবা রাজমিস্ত্রি রাকিবুল ইসলাম তখন ঢাকায় কাজ
করছিলেন। রাতে বাড়ি ফিরে ভেঙে পড়েন তিনি। মা রুনা খাতুন ও
সন্তানের খবরের অপেক্ষায় অস্থির হয়ে পড়েন। দুই বছর চার মাস বয়সী
সাজিদ তিন ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয়।
পরিত্যক্ত গভীর নলকূপের গর্তটির ব্যাস মাত্র ৮ ইঞ্চি। ধারণা করা হয়,
এটি ৯০ ফুট পর্যন্ত গভীর।
উদ্ধারের অগ্রগতির বিষয়ে লে. কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী
জানান, প্রথমে ক্যামেরায় দেখা যায় ৩০ ফুটের নিচে মাটি ও খড়
জমে আছে, ৩৫ ফুটের পর অক্সিজেন পাঠানো বন্ধ করতে হয়, ৪৩
ফুট পর্যন্ত খনন করেও সাজিদের অবস্থান মেলেনি, গর্তের পাশে
তিনটি এক্সকাভেটর দিয়ে নতুন করে খনন করা হয়। পরে গর্তকে আরও
প্রশস্ত করে নতুন কৌশলে সুড়ঙ্গ তৈরির চেষ্টা চলে। কিন্তু ভূমিধসের
আশঙ্কায় সুড়ঙ্গ তৈরির কাজ থামিয়ে দেওয়া হয়। সবশেষে আরও
প্রশস্ত আকারে খনন করে শিশুটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়।
ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক দিদারুল আলম বলেন, নলকূপের
যেকোনো জায়গায় শিশুটি আটকে থাকতে পারেÑএমন ধারণা
থেকেই প্রচণ্ড ঝুঁকি নিয়ে অভিযান চালানো হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ৪৩ ফুট খননেও শিশুর সন্ধান না মেলায়
নতুন পরিকল্পনা নেওয়া হয়।
স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, শিশুটির বাবা-মা ও প্রশাসনের সঙ্গে
আলোচনার পর খনন কার্যক্রম প্রশস্ত আকারে চালানোর সিদ্ধান্ত হয়।
দুপুর আড়াইটা থেকে এক্সকাভেটর দিয়ে গর্তের চারপাশের মাটি
সরিয়ে নতুনভাবে পাইপ ও সার্চ ভিশন ব্যবহার করা হয় শিশুর
অবস্থান শনাক্তের জন্য।
শুক্রবার সকালে কোয়েলহাট মধ্যপাড়া এলাকায় সাজিদের জানাজা
অনুষ্ঠিত হয়। ভোর থেকেই গ্রামের স্বাভাবিক জীবন থমকে যায়।
মসজিদের মাইকে ঘোষণা ভেসে আসছিল, কোয়েলহাট
পূর্বপাড়ার রাকিব উদ্দীনের দুই বছরের শিশু সাজিদ আর নেই।
সে ঘোষণায় কাঁপতে থাকে গোটা গ্রাম। পুরুষ, নারী, বৃদ্ধ,
যুবক, স্কুলপড়ুয়া শিশুরা সবার চোখেই ছিল অশ্রু। জানাজার
মাঠে ছিল মানুষের ঢল। সাদা কাপড়ে মোড়ানো ছোট্ট দেহটি
মাঠে আনার সঙ্গে সঙ্গে কান্নার রোল পড়ে যায়।
জানাজার ইমামতি করেন কাজী মাওলানা মিজানুর রহমান।
নেককিড়ি কবরস্থানে দাফন শেষে শোকাহত পরিবারের জন্য দোয়া
করেন হাজারো মানুষ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাঈমা খান, তানোর
থানার ওসি মোঃ শাহীনুজ্জামান, ইউপি জামায়াত আমির মাও.
জুয়েল রানা-সহ অনেকেই পরিবারকে সান্ত্বনা জানান।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, গভীর নলকূপের মালিক কছির উদ্দিন
পরিত্যক্ত বোরিংটি খোলা অবস্থায় ফেলে রাখেন। সতর্কতা, ঢাকনা
বা কোনো চিহ্ন না থাকায় বড় দুর্ঘটনা ঘটে।
ঘটনার পর থেকেই তিনি এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন বলে,
নিশ্চিত করেছেন তানোর থানার ওসি মোঃ শাহীনুজ্জামান।