চাকরির প্রলোভন, সরকারি দফতরে তদবির, জমি বিক্রি, বিদেশি প্রজেক্ট দেখিয়ে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে শত কোটিরও বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এস এম শামসুদ্দোহা চৌধুরী বিপ্লব (৪৫)। তার প্রতারণায় সর্বশান্ত হয়েছে অসংখ্য মানুষ।
মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) রাতে রাজধানীর শাহআলী থানার মিরপুর-১ এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে র্যাব-৪।
বুধবার (১৭ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বর, পাইকপাড়া র্যাব-৪ এর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান র্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক।
তিনি বলেন, আসল নাম এস এম শামসুদ্দোহা চৌধুরী বিপ্লব। তবে কখনো নেহাল চৌধুরী কখনো আদিল আবার কখনো অনিক এবং কায়সার বা দোহাসহ হরেক নামে পরিচিতি তিনি। ডব্লিওএও গ্রুপ অব কোম্পানি খুলে বসেন বারিধারায়। সেখানে বসেই সামিট গ্রুপসহ বিভিন্ন সোলার পাওয়ার প্লান্ট প্রজেক্টের ঠিকাদার কোম্পানির পরিচয়ে শুরু করেন বহুমুখী প্রতারণা।
তিনি বলেন, কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ নিয়ে লাপাত্তা ও আত্মসাৎ এবং ব্যাংকের চেক জালিয়াতির কারণে এর আগে আটবার জেলে যান দোহা। ৩৮ মামলার আসামি এবং তিন মামলার পরোয়ানাভুক্ত আসামি দোহা রাজধানীর বারিধারাতেই ছিলেন বহাল তবিয়তে। প্রতারণার পর শুধু অফিস পাল্টে ঘুরেফিরে থেকে গেছেন বারিধারাতেই।
দোহার উত্থান বিষয়ে তিনি বলেন, এসএম শামসুদ্দোহা চৌধুরী বিপ্লবের জন্ম পাবনা জেলার চাটমোহর থানাধীন ফৈলজানা গ্রামে। পঞ্চম শ্রেণি পাশ করা দোহা দক্ষিণ কোরিয়ায় শ্রমিক হিসেবে পাড়ি দেন। বিবিএ পাশ বলে প্রচার করলেও ঘোরেন ভুয়া সার্টিফিকেট নিয়ে। ইংরেজি ও কোরিয়ান ভাষা বেশ ভালভাবে রপ্ত করেন। নিজের নাম রেখেন দেন “লি সান হো (Lee San Ho)”। কোরিয়ানদের সঙ্গে প্রতারণা করে বাংলাদেশে এসে বিভিন্ন কোরিয়ানদের ট্যুর গাইড হিসেবে কাজ করেন। এ সুযোগে তিনি বারিধারা ডিওএইচএস এলাকায় নাম সর্বস্ব WAO Group of Company, খুলে চাকরির প্রলোভন, সরকারি দপ্তরে তদবির, বিদেশি প্রজেক্ট দেখিয়ে শুরু করেন প্রতারণা। অন্যের জমি, খাস জমি দখল করে নিজের নামে ভুয়া দলিল তৈরি করে তা অন্যের কাছে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। তার মালিকানাধীন ডব্লিওসিও(DREDGING COMPANY LTD), ডব্লিওএও(WAO POWER PLANT LTD), SOLAR PANEAL LTD ও ANGEL SERVICE LTD নামে চার প্রতিষ্ঠানের সন্ধান পাওয়া গেছে।
ব্লাকমেইল করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন,
নতুন নতুন ভূয়া প্রজেক্টের নাম ব্যবহার করে প্রজেক্টে শেয়ার দেওয়ার নামে ধনী ব্যক্তি, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের কষ্টার্জিত অর্থ প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিতেন।
নারীদের সঙ্গে অশ্লীল ছবি-ভিডিও তুলে প্রতারণা করেন। তার তিন স্ত্রী রয়েছে। এসত্বেও তিনি কম বয়সী ছাত্রী, স্বামী পরিত্যক্তা নারীদের নিজেই প্রথমে প্রেমের ফাঁদে ফেলতেন। এরপর অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক গড়ে ভিডিও করে রাখতেন। পরে তাদের দিয়েই ব্লাকমেইল করে ধনাঢ্য ব্যক্তির সঙ্গে রাত্রিযাপনের সুযোগ করে দিয়ে বড় বড় কাজ হাতিয়ে নিতেন। আবার প্রয়োজনে ভুক্তভোগীদের দমাতে করতেন ব্লাকমেইল। দোহা এঞ্জেল সার্ভিসে নারীদের কাজ করতে বাধ্য করতেন।
লিঁয়াজো মেইনটেইন: সরকারি-বেসরকারি বড় বড় প্রজেক্ট পাওয়ার জন্য অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে বিভিন্ন অফিস এবং প্রতিষ্ঠানে লিঁয়াজো মেইনটেইন করতেন।
প্রতারণা করে হাতিয়ে নিয়েছেন বিদেশি প্রজেকক্টও: দোহার কোম্পানির নাম কখনো WAO, কখনও Powet Plant Service বলে প্রচার করতেন। এই প্রতারণাকে কাজে লাগিয়ে দোহা সম্প্রতি বিদেশি কোম্পানির একটি প্রজেক্টও হাতিয়ে নিয়েছেন। চতুর দোহা তার WAO নামক কোম্পানির ওয়েবসাইটে নিজের যে প্রোফাইল দিয়েছেন তা দেখে বোঝার উপায় নেই যে তিনি আসলেই একজন প্রতারক। ভুক্তভোগী মানুষেরা তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে মামলা করেছেন যার পরিপ্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় প্রতারণাসহ বিভিন্ন মামলার ৩৮টি গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে থানায় প্রতারণা সংক্রান্ত অসংখ্য জিডি ও অভিযোগ রয়েছে।
র্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) আরও বলেন, গ্রেফতার দোহা এসব অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। প্রতারিত অসংখ্য ভুক্তভোগী আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, তাদের মধ্যে ১০/১২ জন প্রতারক দোহার বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্ততি গ্রহণ করছেন। যারা মামলা করতে ইচ্ছুক, র্যাব-৪ তাদের প্রয়োজনীয় আইনগত সহায়তা দিতে প্রস্তুত। তার ব্যাংক, নগদ কিংবা পাচার হওয়া টাকার হদিস খতিয়ে দেখতে সিআইডিকে মানি লন্ডারিং আইনে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হবে।