নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী: রাজশাহীর দুর্গাপুরে ভুয়া এনএসআই
(ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স) সদস্য পরিচয়ে আবারও সক্রিয় হয়ে
উঠেছে রেন্টু নামের এক প্রতারক। চাঁদাবাজির অভিযোগে জেল খেটে
আসার পর কিছুদিন আত্মগোপনে থাকলেও, বর্তমানে সে আরও বেপরোয়া
হয়ে উঠেছে।
ভুয়া পরিচয়ের আড়ালে সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি দেখানো,
চাঁদা দাবি এবং প্রভাব খাটিয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করা তার
নিত্যদিনের কাজে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
দুর্গাপুর পৌর এলাকার দেবিপুর গ্রামের আজিজুল হকের ছেলে মোঃ রেন্টু
ওরফে আসাদুল্লাহ (৩৫) নিজেকে এনএসআই সদস্য পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন
ধরে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে আসছে। আর্থিক লেনদেন বা ব্যক্তিগত
বিরোধের ক্ষেত্রে অনেকে তার দ্বারস্থ হলে, সে ভুয়া পরিচয়ের দাপটে বিষয়টি
নিজের পক্ষে মীমাংসা করার চেষ্টা করে। কেউ প্রতিবাদ করলে উল্টো মামলা বা
সরকারি ঝামেলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখায়।
গত বছরের ডিসেম্বরে দেবিপুরে শরিফুল নামের এক ব্যক্তি মুরগির খামার
নির্মাণ করলে, রেন্টু এনএসআই পরিচয়ে তার কাছে ১ লাখ টাকা চাঁদা
দাবি করে। চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় রেন্টু দলবল নিয়ে খামারটি ভাঙচুর
করে প্রায় ৭ লক্ষ টাকার ক্ষতি করে। এ ঘটনায় শরিফুল বাদী হয়ে দুর্গাপুর
থানায় রেন্টুকে প্রধান আসামি করে মামলা দায়ের করেন। তদন্তে চাঁদা দাবি
ও ভাঙচুরের প্রমাণ মিললে পুলিশ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
সজিব নামের একজন ভুক্তভোগী জানান, কিছুদিন আগে কিশমত গণকৈড়
বিলে আমরা একটি পুকুর খনন করছিলাম। এনএসআই পরিচয় দিয়ে ভয়
দেখিয়ে রেন্টু আমার কাছ থেকে ১ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে। সে
আওয়ামী লীগের সময় আরও বেশি বেপরোয়া ছিল। এই ভুয়া পরিচয় দানকারী
প্রতারক রেন্টুর শাস্তি দাবি করছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ভুক্তভোগী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রেন্টুর
ভয়ে অনেকেই মুখ খুলতে পারে না। সে ভুয়া এনএসআই পরিচয় দিয়ে
এলাকায় এমন একটা আতঙ্ক তৈরি করেছে, যেন কেউ তার বিরুদ্ধে কিছু
বলতে সাহস না পায়।
প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়া ও পূর্বের ঘটনা:
স্থানীয়রা জানায়, এর আগেও রেন্টুর বিরুদ্ধে এনএসআই পরিচয়ে
প্রতারণা, চাঁদাবাজি ও প্রভাব খাটানোর অভিযোগ উঠেছিল। কয়েকবার
প্রশাসনের নজরে এলেও প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় সে পার পেয়ে যায়, ফলে
তার দাপট আরও বেড়েছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বিএনপি
ও জামায়াত নেতাকর্মীদের টার্গেট করে গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ
টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এরই জের ধরে যুবদল ও
ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা তাকে দুর্গাপুর থানা মোড়ে গণধোলাই দেয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভুয়া পরিচয়ধারী রেন্টু বলেন, আমার নামে ৮/৯ মাস
আগে একটি মামলা হয়েছে। ডু অর ডাই বলে কথা আছে। দুনিয়ার সবাই
আপনার বন্ধু না! কারো ব্যাপারে লাগলে সত্য যাচাই করার চেষ্টা করবেন। এই
বলে তিনি ফোন কেটে দেন।
দুর্গাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আতিকুল ইসলাম বলেন, আমি
নতুন এসেছি, এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নাই। তবে এ ব্যাপারে তদন্ত
করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দুর্গাপুরের সচেতন মহল মনে করছেন, দীর্ঘদিন ধরে রেন্টু এ ধরনের
কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেলেও তার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় সে আরও
বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা বলেন, ভুয়া এনএসআই পরিচয় ব্যবহার করে
যদি প্রতারণা ও চাঁদাবাজি চলে, তাহলে সমাজে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা
সম্ভব নয়। এখনই প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।