logo

সময়: ১১:৪৮, মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর, ২০২৫

২০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১১:৪৮ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ খবর

রাজশাহীতে বিএনপির দুর্গ পুনর্গঠনের লড়াই: মনোনয়ন ঘিরে কোন্দল ও প্রতিযোগিতা

Masud Rana
০৩ নভেম্বর, ২০২৫ | সময়ঃ ০৯:৪৬
photo
রাজশাহীতে বিএনপির দুর্গ পুনর্গঠনের লড়াই: মনোনয়ন ঘিরে কোন্দল ও প্রতিযোগিতা

মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী: আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে
সামনে রেখে একসময়ের বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত রাজশাহীতে
দলীয় মনোনয়ন নিয়ে ব্যাপক তৎপরতা ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। জেলার ছয়টি
সংসদীয় আসনেই একাধিক শক্তিশালী প্রার্থী মাঠে থাকায়
নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ ও উদ্দীপনার পাশাপাশি বিভক্তিও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
মনোনয়ন প্রত্যাশীদের এই তীব্র প্রতিযোগিতা তৃণমূল পর্যায়ে নানা
আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে সহিংস সংঘাতেও রূপ নিয়েছে, যা
দলের জন্য সঠিক প্রার্থী বাছাইকে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়
করিয়েছে।
রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর): এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন ঘিরে
সবচেয়ে বেশি উত্তেজনা ও সহিংস পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিএনপি
চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) শরীফ উদ্দিন এবং গোদাগাড়ী
উপজেলা বিএনপির সদস্য অ্যাডভোকেট সুলতানুল ইসলাম তারেকের মধ্যে
মূল প্রতিদ্বন্দিতা চলছে। উভয়ের অনুসারীদের মধ্যে বেশ কয়েক দফা সংঘর্ষের
ঘটনা ঘটেছে। এই অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে গণিউল হক নামে এক
বিএনপি কর্মী এবং নেকশার আলী নামে এক কৃষক দল নেতা নিহত হওয়ার পর
পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে। এই আসনে আরও মনোনয়ন
প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন শিল্পপতি সুলতানুল ইসলাম তারেক, সুপ্রিম
কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলন, এবং যুক্তরাষ্ট্র
প্রবাসী অধ্যাপক শাহাদৎ হোসেন শাহীনসহ আরও বেশ কয়েকজন। তবে,
নেতাকর্মীদের মাঝে এমন প্রচারও রয়েছে , বিএনপির হাইকমান্ড থেকে
মেজর জেনারেল (অব.) শরীফ উদ্দিনকে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি,
মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে শরীফ উদ্দিন, ব্যারিস্টার মিলন এবং সুলতানুল
ইসলাম তারেককে ঢাকায় সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয়।
রাজশাহী-২ (সদর): রাজশাহী সদর আসনে মনোনয়ন নিয়ে মূল আলোচনায়
আছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান
মিনু এবং মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্ধসঢ়;বায়ক অ্যাডভোকেট এরশাদ
আলী ঈশা। মিনু তার দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও পরিচ্ছন্ন
ভাবমূর্তিকে পুঁজি করে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে থাকতে চাইছেন।
অন্যদিকে, অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা তার সাংগঠনিক তৎপরতার মাধ্যমে
তৃণমূলে নিজের অবস্থান শক্তিশালী করার চেষ্টা করছেন। এদের পাশাপাশি,
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর অনুসারীরাও তাকে
প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান এবং এ নিয়ে প্রচারণাও চালাচ্ছেন।
রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর): জেলার অন্য আসনগুলোর তুলনায় এখানে
পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে শান্তিপূর্ণ। এই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের
মধ্যে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ ও
পুনর্বাসনবিষয়ক সহসম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন, রাজশাহী

জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রায়হানুল আলম রায়হান এবং প্রয়াত মন্ত্রী
কবীর হোসেনের ছেলে নাসির হোসেন অস্থির। উভয় নেতাই নিজ নিজ
সমর্থকদের নিয়ে গণসংযোগ চালাচ্ছেন।
রাজশাহী-৪ (বাগমারা): বাগমারা আসনে উপজেলা বিএনপির আহ্ধসঢ়;বায়ক
ডিএম জিয়াউর রহমান (জিয়া) এবং সদস্য সচিব অধ্যাপক কামাল
হোসেনের মধ্যে মনোনয়ন প্রতিযোগিতা জমে উঠেছে। তবে ডিএম
জিয়ার স্বজনদের বিরুদ্ধে ওঠা কিছু অভিযোগকে তার বিরোধী পক্ষ
প্রচারণার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করায় এখানকার রাজনৈতিক
পরিস্থিতি কিছুটা জটিল। এছাড়াও রাজশাহী জেলা যুবদলের সদস্য সচিব
রেজাউল করিম টুটুলও মনোনয়ন প্রত্যাশী। এই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীর
সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি।
রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর): এই আসনে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক
মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকায় প্রতিযোগিতা বেশ তীব্র এবং এখানেও দলীয়
কোন্দলে হাসিবুল ইসলাম নামে এক বিএনপি কর্মী খুন হয়েছেন। তবে
মূল আলোচনায় রয়েছেন পুঠিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্ধসঢ়;বায়ক আবু বক্কর
সিদ্দিক এবং কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক
মাহমুদা হাবিবা। এছাড়াও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল
ইসলাম মন্ডলও জনপ্রিয়তার দৌড়ে এগিয়ে আছেন বলে জানা যায়। দীর্ঘদিন
যুক্তরাজ্যে থাকা রেজাউল করিম নামে এক প্রবাসীও এই আসনে মনোনয়ন
চান।
রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট): বাঘা-চারঘাট আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের
মধ্যে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দী হলেন জেলা বিএনপির আহ্ধসঢ়;বায়ক আবু সাঈদ
চাঁদ এবং দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দেবাশীষ রায় মধু। আবু সাঈদ
চাঁদ গত নির্বাচনেও দলের প্রার্থী ছিলেন এবং এলাকায় তার শক্তিশালী
অবস্থান রয়েছে তাঁর। অন্যদিকে, ছাত্রদলের মাধ্যমে রাজনীতিতে আসা দেবাশীষ
রায় মধুও নিয়মিত গণসংযোগ ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে
জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করেছেন। এছাড়াও এই আসনে সাবেক ছাত্রনেতা
আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল এবং মালয়েশিয়া প্রবাসী আরিফুল ইসলাম
বিলাতও মনোনয়ন প্রত্যাশী।
এদিকে, নির্বাচনী জোট ও যুগপৎ আন্দোলনের মিত্রদের জন্য সম্ভাব্য আসন
রেখে একক প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে বিএনপি।
সোমবার (৩ নভেম্বর) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক
কার্যালয়ে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেলা সাড়ে
১২টা থেকে শুরু হওয়া এই বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠক শেষে সাংগঠনিক ও সহ-
সাংগঠনিক সম্পাদকদের নিয়েও বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে,
এই বৈঠক থেকেই প্রায় ২০০ আসনে একক প্রার্থীর তালিকা চূড়ান্ত করা
হতে পারে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রার্থী চূড়ান্তকরণের ক্ষেত্রে স্থানীয়
পর্যায়ের প্রতিবেদন, জনপ্রিয়তা, দলের প্রতি আনুগত্য এবং
আন্দোলনকালীন ভূমিকা বিশেষভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

শেয়ার করুন...

আরও পড়ুন...

ফেসবুকে আমরা…