Masud Rana
মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী: গত বুধ ও বৃহস্পতিবারের ভারী বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় রাজশাহীর তানোর উপজেলায় আমন ধানের পাকা গাছ নুয়ে পড়েছে। ফলে কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। একই সাথে শীতকালীন আগাম শাক-সবজি সহ বিভিন্ন রবিশস্যও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘরে তোলার ঠিক আগে এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
শুক্রবার উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় , অনেক আমন খেতের পাকা ও আধা-পাকা ধানগাছ মাটিতে শুয়ে পড়েছে। এতে ফলন হ্রাসের আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। এছাড়াও, শীতকালীন আগাম শাক-সবজির খেতও ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে। ঝড়ো বৃষ্টির পর অনেক এলাকায় আমন খেতের পচন ও পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এতে দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়েছে কৃষকদের।
কামারগাঁ ইউপির কৃষক সুমন আলী জানান, গত দুই দিনের ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিতে ধানগাছ মাটিতে নুয়ে পড়ায় তিনি ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। কৃষক রবিউল ইসলামের বলেন, গত বছর ধানের ভালো দাম পাননি, এ নিয়ে হতাশায় ছিলেন। আগামী সপ্তাহ থেকে তার ১০ বিঘা জমির ধান কাটা শুরু হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু হঠাৎ ঝড়-বৃষ্টিতে বেশিরভাগ ধান গাছ মাটিতে শুয়ে পড়েছে। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ যেন 'মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা'।
কৃষক আয়ুব আলী ও আব্দুল আলী বলেন, বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসের কারণে ইতিমধ্যেই চরম ক্ষতি হয়ে গেছে। এক একর জমিতে আগে যেখানে প্রায় ৫০ মণ ধান পাওয়া যেত, এখন সেখানে ৩০ মণ আসতে পারে। এছাড়াও, শিব নদীর পাড় ও নিচু এলাকায় আমন খেতে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
বৃষ্টি-ঝড়ো হাওয়ায় কি পরিমাণ আমন খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেই তথ্য কৃষি বিভাগ জানাতে পারেনি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মেদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। ফলে তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, চলতি মৌসুমে তানোর উপজেলায় আমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২২ হাজার ৬৩৫ হেক্টর। এর মধ্যে হাইব্রিড ২৮ হেক্টর, উফশী জাত ২২ হাজার ১১৭ হেক্টর এবং স্থানীয় জাতের চাষ হয়েছে ৫৫০ হেক্টর। চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬০ হাজার ২৯৮ মেট্রিক টন।
উপজেলার স্বর্ণপদক প্রাপ্ত স্বশিক্ষিত কৃষি বিজ্ঞানী নূর মোহাম্মদ জানান, রোপা-আমন রোপণের শুরুর দিকে কৃষকদের প্রচুর বেগ পেতে হয়েছে। অতি বৃষ্টি ও সার নিয়ে অসহনীয় সিন্ডিকেট ছিল। আর শেষ মুহূর্তে বৃষ্টি-ঝড়ো হাওয়ায় নুয়ে পড়া আমনের উৎপাদন কিছু হ্রাস পাবে।
এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে তানোরের কৃষকরা চরম সংকটে পড়েছেন। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ কামনা করছেন