logo

সময়: ০৩:১৮, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫

১২ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ০৩:১৮ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ খবর

হেরোইন মামলার ভয় দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগ বাঘা থানার এএসআই ওসি তদন্তের বিরুদ্ধ

Ekattor Shadhinota
২৭ অক্টোবর, ২০২৫ | সময়ঃ ১১:০৭
photo
হেরোইন মামলার ভয় দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগ বাঘা থানার এএসআই ওসি তদন্তের বিরুদ্ধ

হেরোইন মামলার ভয় দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগ বাঘা থানার এএসআই ওসি তদন্তের বিরুদ্ধ  

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় স্থানীয় এক কৃষকের অভিযোগ, তাকে “হেরোইন মামলায় ফাঁসানোর ভয়” দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করেছেন বাঘা থানার এএসআই মোস্তাফিজ।

 শনিবার (২৫ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার পানিকামড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা।

 

ভুক্তভোগী মো. জুয়েল রানা (৩২), বাঘা উপজেলার ৩নং পাকুরিয়া ইউনিয়নের পানিকামড়া জোটকাদীরপুর এলাকার রঞ্জিত মন্ডলের ছেলে। তিনি পেশায় একজন কৃষক। এছাড়া তার নামে ৬পিস ফেন্সিডিলের একটি মামলা আদালতে ইতিমধ্যে চলমান রয়েছে।

 

তিনি জানান, ঘটনার দিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে স্থানীয় বাজার থেকে বাড়ি ফেরার সময় এএসআই মোস্তাফিজ ও সহযোগী ফোর্স তাকে রেজাউল দোকানের সামনে আটক করে দেহ তল্লাশি করে।

 

“ওরা আমার পকেটে হাত দিয়ে একটা ছোট প্যাকেট বের করে বলে এই তো মাল পেয়েছি। এরপর তারা গুণে গুণে ১০ পিস ইয়াবা আমাকে দেখায়, যেটা আমার ছিল না। ইয়াবা ব্যবসায়ী পেয়েছি, এবার ১০০গ্রাম হেরোইন মামলায় চালান দেব। তারপর এএসআই মোস্তাফিজ ১ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করেন।

 

জুয়েল রানা বলেন, স্যার এই ইয়াবা আমার না, আপনি তো আমার পকেটে ঢুকিয়েছেন। আর ইয়াবা কে কেন আপনি হেরোইন বলছেন, তখন এএসআই মোস্তাফিজ বলেন, ইয়াবাকে হেরোইন বানাতে কতক্ষণ সময় লাগবে আমাদের।

এএসআই মোস্তাফিজ প্রথমে ১ লক্ষ টাকা দাবি করেন, পরে আমি ভয়ে হাত-পা ধরে বলি, স্যার অমি মাঝে মাঝে খায় কিন্তু আমি ব্যবসায়ী না। এরপর তিনি আমাকে হাতকড়া পরিয়ে মোটরসাইকেল যোগে কালীদাসখালী স্কুল মাঠে নিয়ে যায়। আমি গরিব মানুষ স্যার আমাকে ছেড়ে দেন, তখন দর-কষাকষির পর ৫০ হাজার টাকায় সমঝোতা হয়।

 

এরপর আমি বাড়িতে ফোন দিলে আমার ছোট ভাইয়ের বন্ধু শিমুলের মাধ্যমে টাকা পাঠানো হয়। টাকা পাওয়ার পর আনুমানিক রাত ১০টার দিকে আমাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

 

ভুক্তভোগীর স্ত্রী মোছা. বিনা খাতুন জানান, আমার দেবর ও শিমুল এসে বলে, হেরোইনসহ আপনার স্বামীকে পুলিশ ধরেছে, ৫০ হাজার না দিলে, ছাড়বে না। আমরা গরিব মানুষ, শোনার পর পর ৩০ মিনিটের মধ্যে আমি ধার-দেনা করে টাকা জোগাড় করে ৫০ টাকা গুলো দেবরের হাতে তুলে দেই। এরপর রাত সাড়ে ১০টার দিকে জুয়েল বাড়ি ফিরে আসে। এরপর আমার স্বামীর কাছে থেকে আসল ঘটনা শুনতে পাই , পকেটে তারা ইয়াবা ঢুকিয়ে, হেরোইন মামলা দিয়ে চালান দেওয়ার ভয় দেখিয়ে এই কান্ড ঘটিয়েছে।

 

তিনি আরও বলেন, আমরা গরিব মানুষ, দিন আনি দিন খাই। টাকা গুলো ধার-দেনা করে আমি জোগাড় করেছি। যদি কেউ আমাকে এর সুষ্ঠ বিচার করে টাকাগুলো ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়, তাহলে আমার অনেক উপকার হবে। আমি ধার পরিশোধ করব।

 

অভিযুক্ত এএসআই মোস্তাফিজকে রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি  অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ। গতকাল আমার থানার বাইরে ডিউটি ছিল না। কে বা কারা এমন কথা বলছে, জানি না। তবে ঝামেলা এড়াতে গতকাল রবিবার ২০ হাজার টাকা একটি মাধ্যম দিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছেন ওই এএসআই। 

জানতে চাইলে বাঘা থানার ইন্সপেক্টর (ওসি তদন্ত) সুপ্রভাত মণ্ডল বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

 

বিষয়টি বাঘা থানা পুলিশের দুই কর্মকর্তা অস্বীকার করলেও দুপুর সাড়ে ৩টার পর শুরু হয় ওসি সুপ্রভাত মন্ডল ও এএসআই মোস্তাফিজের দৌঁড়ঝাপ। একাধিক বাঘা থানার পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি পাঠিয়ে এ প্রতিবেদককে ম্যানেজ করা চেষ্টা করা হয়। এরপর সাংবাদিক সাফ জানিয়ে দেন, ভুক্তভোগী জুয়েলকে যেন তার ৫০ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে দেওয়া হয়।

পুলিশের সেই প্রতিনিধি আস্বস্ত করেন, অবশ্যই তাদের টাকা পরিশোধ করা হবে। আপনার কাছে অনুরোধ নিউজ করবেন না।

 

এরপর সোমবার (২৭ অক্টোবর) সকালে জানা যায়, সেই পরিবারকে চাঁদার ৫০ হাজার টাকা ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও মাত্র ২০ হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হয় এবং বাকি ৩০ হাজার টাকা নাকি বাঘা থানা পুলিশ খরচ করে ফেলেছে। তাই পরিবারের কাছে মাফ চেয়ে ২০ হাজার টাকা দিয়ে মিটমাট করেছে এএসআই মোস্তাফিজ ও ওসি তদন্ত সুপ্রভাত মন্ডল বলেও জানায় ভুক্তভোগী জুয়েলের পরিবার।

 

এ বিষয়ে সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাজশাহী জেলা পুলিশের মূখপাত্র (ডিএসবি) মোঃ রফিকুল আলম এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,  বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এ ধরনের অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর। যদি কোনো পুলিশ সদস্য এর সঙ্গে জড়িত থাকে, তবে প্রমাণ সাপেক্ষে বিভাগীয় ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

 

এদিকে একাধিক স্থানীয়রা বলছেন, বাঘা থানা পুলিশের এ ধরনের ঘটনা নতুন নয়। মাঝে-মধ্যে মাদক মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করে থাকে পুলিশ। তবে অনেক ভুক্তভোগী ভয় ও প্রতিশোধের আশঙ্কায় মুখ খোলেন না।

শেয়ার করুন...

আরও পড়ুন...

ফেসবুকে আমরা…