স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট_:- হিন্দুদেরকে নিজেদের সংখ্যালঘু মনে না করে এ দেশের নাগরিক মনে করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৷ পাশাপাশি তাদেরকে সামানভাবে নাগরিক অধিকার ভোগ করারও আহ্বান জানান তিনি ৷
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়কে আমি এটাই বলবো আপনারা এদেশের মানুষ। কাজেই নিজেদেরকে সংখ্যালঘু মনে না করে মনে করবেন আপনারা এই দেশেরই নাগরিক।
তাই সামানভাবে নাগরিক অধিকার আপনারা ভোগ করবেন এবং আমরাও সেইভাবে আপনাদেরকে দেখকে চাই।
বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘শুভ জন্মাষ্টমী’ উপলক্ষ্যে জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ এবং বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে এ কথা বলেন। এ সময় তিনি গণভবন থেকে ঢাকা ও চট্রগ্রামে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন ৷
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা এদেশ স্বাধীন করার পর তিনি আমাদের যে সংবিধান দিয়েছিলেন; সংবিধানের যে চার মূলনীতি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। ধর্মনিরপেক্ষতাকে তিনি গুরুত্ব দিয়েছিলেন অর্থাৎ সবধর্মের ধর্মের মানুষ সমানভাবে ধর্ম পালন করবে এবং এই মাটিতে তাদের জন্ম সবার অধিকার নিয়েই বাস করবে- এটাই তার লক্ষ্য ছিলো। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পরে এখানে সত্যি কথা বলতে কি আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপরে সবচেয়ে বেশি আঘাত এসেছিল। জাতির পিতাকে হত্যার পর প্রথমেই ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশকে ইসলামী রাষ্ট্র হিসেবে। যদিও জনগণের চাপে সেটা করতে পারেনি, কিন্তু উদ্দেশ্য এটাই ছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন এটা আমাদের দেশের এক শ্রেণী মানুষ মেনে নিতে পারেনি। আমরাই আওয়ামী লীগ জাতির পিতা সেই আদর্শকে বিশ্বাস করি এবং আমরাই শ্লোগান দিই ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’। বাংলাদেশই একমাত্র ব্যতিক্রমধর্মী দেশ এখানে কিন্তু যেকোনো ইচ্ছা উৎসবে, সবাই সমবেত হয়, সে উৎসব সবাই উদযাপন করে । আমাদের ঈদের সময় যেমন সবাই আমরা একসঙ্গে মিলিত হই, আবার যে কোনো পূজা বা যিশু খ্রীষ্টের জন্ম, সবাই কিন্তু সমান ভাবে থাকে । আমাদের কিছু শিয়া সম্প্রদায় আছে তারা যখন কারবালার সেই শহীদ দিবসটা পালন করে আমরা সবাই কিন্তু সেটা একইসঙ্গে উদযাপন করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিন্তু এই যে সুন্দর পরিবেশ এই পরিবেশটা নষ্ট করবার জন্য অনেক চেষ্টা করা হয়। একটা শ্রেণী কিন্তু আছে, এটা কিন্তু শুধু একটা ধর্মে নয়, সব ধর্মেই এই জাতীয় কিছু আছে যারা মাঝেমাঝেই এক একটা সমস্যা সৃষ্টি করার চেষ্টা করে। কিন্তু যখনই কোনো ঘটনা ঘটে আমাদের পক্ষ থেকে সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে একটা জিনিস আমি দুঃখের সঙ্গে বলছি, যখন একটা ঘটনা ঘটলো সে ঘটনাটাকে এমন ভাবে শুধু দেশে-বিদেশে আন্তর্জাতিক পর্যায় এমনভাবে প্রচার করা হয় মনে হয় যেন এ দেশে হিন্দুদের কোনো অধিকারই নাই। কিন্তু ঘটনার পর আমাদের যে অ্যাকশন; সে যে ধরনের হোক তাকে আমরা গ্রেফতার করি, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিই- সেই বিষয়টা কিন্তু তুলে ধরা হয় না। এমনকি এটা করতে গিয়ে অনেক মুসলমানও কিন্তু পুলিশের গুলিতে মারা গেছে। মন্দির রক্ষা করতে গিয়ে এরকম ঘটনাও কিন্তু আছে। যেটা কুমিল্লায় ঘটেছিল, এই কথাগুলো কিন্তু বলা হয় না। সেখানে প্রচারটা করা হয় যে বোধ হয় হিন্দুরা এখানে ভীষণ খারাপ অবস্থায় আছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা নিজেরাই জানেন যখনই কোনো ঘটনা ঘটেছে, এমনকি সেই আশির দশকে ঘটনা ঘটেছে, আমি নিজে, আমরা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে গিয়েছি। আমরা তখন সরকারে ছিলাম না। ‘৯১ সালে বিভিন্ন জায়গায় মন্দির ভাঙ্গা হয়েছে আমরা ছুটে চলে গেছে সেখানে। এই ঢাকেশ্বরী মন্দির পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, আমরা এটা নতুন ভাবে ঘুরে দিয়েছি। পাশাপাশি ঢাকেশ্বরী মন্দিরের জমিগুলিও কিন্তু আমরা দখল মুক্ত করে তাকে আরও সম্প্রসারিত করার ব্যবস্থা করেছি। আমার তো মনে হয় যে আপনারা যদি হিসাব করেন পশ্চিমবঙ্গে বা কলকাতায় যতগুলি পূজা মন্ডপ না হয় আমাদের ঢাকা শহরে তার থেকে কিন্তু অনেক বেশি হয়। সারা বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে শারদীয় পূজা উদযাপন করা হয়। আমরা সবাই; আমাদের দলের নেতাকর্মী আমরা সরকারের পক্ষ থেকে সব সময় সেখানে যাই । আমরা একসঙ্গে যেমন মসজিদ তৈরি করি, তেমনি মন্দির গির্জা মাঠ যেখানে আছে সবগুলো সংস্কার এবং সুরক্ষার জন্য পদক্ষেপ নিই। ২০০১-এ যখন সরকার পরিবর্তন হলো বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় আসলো বিভিন্ন জায়গায় সেখানে প্রত্যেক ধর্মের মানুষের উপরে কিন্তু আঘাতে এসেছে। অর্থাৎ যারা অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাস করে ধর্মনিরপেক্ষতা বিশ্বাস করে তাদের উপরে কিন্তু আঘাত এসেছে এবং কত মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে, পাশবিক অত্যাচার হয়েছে। আমরা তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছি এবং নিচ্ছি কাজেই আমি সেদিক থেকে বলব আমরা মানব ধর্মেই বিশ্বাস করি এবং শ্রীকৃষ্ণ কিন্তু তাই চেয়েছিলেন। দুষ্টু দমন সৃষ্টির পালন- এটাই ছিল তার লক্ষ। তিনিও কিন্তু অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাস করতেন, ঠিক তেমনি আমরা আমাদের মহানবী (সা.) সব সময় সবধর্মের সমান অধিকারের কথা তিনি বলেছেন, তিনি সেটা বিশ্বাস করতেন । এমন কি আমাদের কোরআন শরীফে সূরা কাফিরুনের স্পষ্ট লেখা আছে লাকুম দিনুকুম ওয়ালিয়াদিন’। অর্থাৎ যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে এবং আমরা সেই চেতনাই বিশ্বাস করি । কারো ধর্মে অনুমতিতে আঘাত দিয়ে কোনো কথা বলা ঠিক না, কারণ এটা হচ্ছে বিশ্বাস যে যেটা বিশ্বাস করে। আমরা যদি বিশ্বাস করি এই বিষয়টা আল্লাহ সৃষ্টি করেছে তাহলে যে ধর্ম বর্ণ যেটাই আছে কার মধ্যে কি আছে সেটা আমরা জানি না, সৃষ্টিকর্তাই জানে। আমরা এখানে চাই যে আমাদের সবধর্মের মানুষ নিজেদের সমান অধিকার নিয়ে বসবাস করবে। এদেশের মাটিতে সবার সমান অধিকার, আমারও যতটুকু অধিকার আপনাদেরতো ততটুকু অধিকার রয়েছে৷
দ্রব্যমূল্য প্রসঙ্গে প্রথানমন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্বে প্রত্যেকটা জিনিসের দাম আজকে বেড়ে গেছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যেমন ইংল্যান্ডে মুদ্রাস্ফীতি ১০ দশমিক ১ শতাংশে উঠে গেছে। প্রতিটি দেশে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, আমাদের যেসব জিনিস আমদানী করতে হয় তার দামও যেমন বেড়েছে, পরিবহন খরচও বেড়েছে। কাজেই আমাদের কিছুটা কৃচ্ছ্রতাসাধন করতে হবে। আমি জানি আমরা তেলের দাম বাড়ানোর পর দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাচ্ছে, তবে যেটা স্বাবাবিকভাবে বাড়ছে সেটা নয় কেউ আবার অধিক মুনাফার জন্য অতিরঞ্জিত করছে। কাজেই সেখানে আমরা মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করছি, আমরা সেখানে খোঁজ খবর নিচ্ছি এবং সেই সঙ্গে আমরা কিছু ব্যবস্থাও নেব।
এ সময় তিনি ৫০ লাখ মানুষকে ১৫ টাকা কেজি দলে চাল কেনার এবং প্রায় এক কোটি লোককে বিশেষ পারিবারিক কার্ডের আওতায় ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্য কেনার সুযোগ করে দেওয়ায় তাঁর সরকারের পদক্ষেপের উল্লেখ করেন।