logo

সময়: ০৯:৫১, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ০৯:৫১ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ খবর

বরেন্দ্র অঞ্চলে ৩৫০ ফুটেও মিলছে না পানি

Masud Rana
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ | সময়ঃ ১০:৪৪
photo
বরেন্দ্র অঞ্চলে ৩৫০ ফুটেও মিলছে না পানি

মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী: রাজশাহী অঞ্চলে অব্যাহতভাবে
নিচে নামছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ
(বিএমডিএ) ও ব্যক্তিমালিকানায় স্থাপিত হাজার হাজার গভীর ও
অগভীর নলকূপের মাধ্যমে নির্বিচারে পানি উত্তোলনের ফলে বরেন্দ্র
অঞ্চলের ৪০ শতাংশেরও বেশি ইউনিয়নে তীব্র পানিশূন্যতা দেখা
দিয়েছে। এতে করে খাবার পানি ও সেচÑদুই ক্ষেত্রেই চরম সংকট
তৈরি হয়েছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি শুষ্ক মৌসুমে
রাজশাহীর তানোর ও গোদাগাড়ীর বিভিন্ন এলাকায় ৩৫০ ফুট
গভীরেও পানির স্তর পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে এর আগেই বসানো
সাবমার্সিবল পাম্পগুলো একের পর এক অচল হয়ে পড়ছে।
পানি সংকটের কারণে তানোর ও গোদাগাড়ীতে একের পর এক খনন
করা হচ্ছে বোরহোল বা গভীর গর্ত। ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের জন্য
লোহার পাইপ দিয়ে ১৬০ থেকে ২০০ ফুট গভীর গর্ত খুঁড়েও অনেক
স্থানে পানির স্তর পাওয়া যাচ্ছে না। এতে করে খনন করা গর্তগুলো
পরিত্যক্ত অবস্থায় খোলা রেখেই নতুন করে অন্য স্থানে পানি খোঁজা
হচ্ছে। এসব খোলা গর্ত মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।
এরই মধ্যে এমন একটি পরিত্যক্ত গর্তে পড়ে মর্মান্তিক মৃত্যু
হয়েছে তানোর উপজেলার কোয়েলহাট গ্রামের দুই বছরের শিশু
সাজিদ হোসেনের। গত বুধবার (১০ ডিসেম্বর) শিশুটি গর্তে
পড়ে যায়। প্রায় ৩২ ঘণ্টা পর মাটির প্রায় ৫০ ফুট নিচ থেকে
উদ্ধার করা হয় তার মরদেহ।
এই ঘটনার পর রাজশাহী বিভাগে স্থাপিত গভীর নলকূপের তথ্য চেয়ে
চিঠি দিয়েছে বিভাগীয় কমিশনারের দপ্তর। বরেন্দ্র উন্নয়ন
কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)
সেচ বিভাগকে আগামী ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে গভীর নলকূপের
সংখ্যা এবং পরিত্যক্ত অবস্থায় উন্মুক্ত পাইপের মুখ থাকা নলকূপের তথ্য
দিতে বলা হয়েছে। অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার রেজাউল আলম
সরকার স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, উন্মুক্ত পাইপের মুখ
দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
এদিকে ওয়াটার রিসোর্স প্ল্যানিং অর্গানাইজেশন (ওয়ারপো)-
এর আওতায় ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডাব্লিউএম)

পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে
রাজশাহী অঞ্চলে পানি সংকটাপন্ন এলাকার পরিধি ক্রমেই বাড়ছে।
‘উঁচু বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূপৃষ্ঠ ও ভূগর্ভস্থ পানি পরিস্থিতির
হাইড্রোলজিক্যাল অনুসন্ধান ও মডেলিং’ শীর্ষক ওই গবেষণা
২০১৮ সালে শুরু হয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত পরিচালিত হয়।
গবেষণায় দেখা যায়, ২০২১ সালের মধ্যে বরেন্দ্রাঞ্চলের বিস্তীর্ণ
এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর গড়ে ১৮ মিটার পর্যন্ত নেমে গেছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার একটি স্থানে
সর্বোচ্চ ৪৬.৮৭ মিটার পর্যন্ত পানির স্তর নেমে যাওয়ার রেকর্ড
পাওয়া গেছে।
রাজশাহী, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মোট ২১৪টি
ইউনিয়নের মধ্যে অন্তত ৮৭টি ইউনিয়নকে অতি উচ্চ ও উচ্চ পানি
সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বিএমডিএ সূত্র জানায়, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলায়
তাদের অধীনে মোট ১৫ হাজার ৮৪২টি গভীর নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে
প্রায় এক হাজারটি নদী থেকে পানি উত্তোলনে ব্যবহৃত হলেও বাকি
প্রায় ১৫ হাজার নলকূপ দিয়ে ভূগর্ভস্থ পানি তুলে সেচকাজে
ব্যবহার করা হচ্ছে। কিছু এলাকায় এই পানিই খাবার পানির উৎস
হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে।
উন্নয়নকর্মী শহীদুল আলম বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলে পানি এখন
রীতিমতো বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত হয়েছে। মুনাফার জন্য
নির্বিচারে পানি উত্তোলন করা হচ্ছে, যা প্রকৃতি ও মানুষের
জীবনের জন্য মারাত্মক হুমকি। এইভাবে চলতে থাকলে রাজশাহী অঞ্চল
দ্রুত মরুকরণের দিকে চলে যাবে।
তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাঈমা খান বলেন,
পরিত্যক্ত ও খোলা রাখা গর্তগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত বন্ধ করার ব্যবস্থা
নেওয়া হচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে গভীর বা সেমিডিপ নলকূপ বসাতে
দেওয়া হবে না। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া
হবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক
চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর
অতিনির্ভরশীলতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এই সংকট থেকে বের
হতে হলে ভূপৃষ্ঠের পানি ও ভূগর্ভস্থ পানির সমন্বিত ব্যবহার নিশ্চিত
করতে হবে। কিন্তু বাস্তবে সেই সুপারিশ কার্যকর হচ্ছে না। 

শেয়ার করুন...

আরও পড়ুন...

ফেসবুকে আমরা…