Masud Rana
মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী: নাটোরের লালপুর উপজেলায় পদ্মা
নদীর দিয়ার বাহাদুরপুর বালু মহাল নিয়ে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা
দিয়েছে।
৯ কোটি ৬০ লক্ষ টাকায় বালু মহালটি বৈধভাবে ইজারা নিয়েও
কতিপয় প্রভাবশালী গোষ্ঠীর বাধার মুখে বালু উত্তোলন করতে
পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন মেসার্স মোল্লা ট্রেডার্স
নামের একটি প্রতিষ্ঠান।
প্রভাবশালীরা ১৭-১৮ বছর আগের
মেয়াদোত্তীর্ণ অনুমতিপত্র ও আদালতের পুরোনো রায়কে পুঁজি
করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে বলে দাবি করছেন ইজারাদার।
মেসার্স মোল্লা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী শহিদুল মোল্লা এক
আবেদনে জানিয়েছেন, তিনি বাংলা ১৪৩২ সনের জন্য নাটোর
জেলা প্রশাসন থেকে দিয়ার বাহাদুরপুর বালু মহালটি ইজারা
নিয়েছেন। কিন্তু তিনি বৈধভাবে বালু উত্তোলন করতে গেলে
কতিপয় দুষ্কৃতিকারী তাকে ও তার কর্মীদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।
এমনকি বালু কিনতে আসা বাল্কহেডগুলোকেও বাধা দেওয়া হচ্ছে
এবং তারা নিজেরাই ড্রেজার ও বাল্কহেড ব্যবহার করে বালু তুলে
নিয়ে যাচ্ছে। ফলে বৈধ ইজারাদার অর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন
এবং কয়েক কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা করছেন।
অভিযুক্ত ব্যক্তিরা দাবি করছে, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন
কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়
২০০৮ সালে তাদেরকে নদীর তলদেশ থেকে বালু উত্তোলনের জন্য
অনাপত্তিপত্র (ঘঙঈ) দিয়েছিল এবং এ বিষয়ে আদালতের আদেশও
রয়েছে।
তবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের তথ্যানুসারে, ২০০৭-২০০৮ সালে যখন বালু
মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কোনো সুনির্দিষ্ট আইন ছিল
না, তখন মেসার্স বিশ্বাস এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স শাওন
এন্টারপ্রাইজ এবং মেসার্স আনোয়ারুল হক মাসুম নামের
তিনটি প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট পরিমাণ (১০ থেকে ৩০ লক্ষ ঘনফুট)
এবং নির্দিষ্ট সময়ের (১৮০ থেকে ৩৬০ দিন) জন্য বালু উত্তোলনের
অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। সেই অনুমতির মেয়াদ বহু আগেই শেষ
হয়ে গেছে।
দপ্তরের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, ২০১০ সালে বালু মহাল ও মাটি
ব্যবস্থাপনা আইন এবং ২০১১ সালে সংশ্লিষ্ট বিধিমালা প্রণীত
হওয়ার পর পুরোনো ঐসব অনাপত্তিপত্রের কোনো কার্যকারিতা
নেই। আইন অনুযায়ী, বর্তমানে বালু মহাল ইজারা দেওয়ার একমাত্র
এখতিয়ার জেলা প্রশাসনের।
জানা গেছে, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা বালু উত্তোলন নিয়ে উচ্চ আদালতে
একাধিক মামলা দায়ের করেছিল। এর মধ্যে একটি রিট পিটিশন
(নং-২৮৯৪/২০১৯) ২০১৯ সালে আদালত খারিজ করে দেন। অন্য দুটি
রিট পিটিশনের (নং-১৩০৯/২০১৪ এবং ৬৫৬৯/২০১৫) ক্ষেত্রে আদালত
২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর একটি রায় দেন, যেখানে নৌচলাচল
ঠিক রেখে বালু উত্তোলনের সুযোগের কথা বলা হয়েছিল।
সরকারি সূত্র বলছে, আদালতের সেই রায়ের পর প্রায় পাঁচ বছর
পেরিয়ে গেছে এবং এই দীর্ঘ সময়ে অভিযুক্তরা নির্ধারিত
পরিমাণের চেয়ে বহুগুণ বেশি বালু উত্তোলন করেছে। সুতরাং, এখন
সেই রায়কে ভিত্তি করে বালু উত্তোলনের কোনো সুযোগ নেই।
বর্তমানে দৃস্কৃতীকারীরা পাবনা জেলার ঈশ্বরর্দীর সাড়াঘাট ও
কুষ্টিয়ার হরিপুর ঘাট থেকে পেশি শক্তির প্রভাব দেখিয়ে
অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। ফলে বৈধ ইজারাদার মেসার্স
মোল্লা ট্রেডার্সের সাথে জড়িত ব্যবসায়ীগণ এবং বাঘা
লক্ষীনগর মোজায় বালু মহালটি ইজারা নিয়েছে মেসার্স সরকার
ট্রেডার্সের প্রোপাটার এসএম একলাস আহমেদ (রমি) বিপুল
আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। সেই সাথে রাজস্ব থেকে
বঞ্চিত হচ্ছেন সরকার। ইজারাদার এসএম একলাস আহমেদ (রমি)
বলেন, আমরা কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে সরকার
বাহাদুরের নিকট থেকে বালু মহাল ইজার নিয়েছি। আর অবৈধ
দূস্কৃতীকারী সন্ত্রাসীরা গায়ের জোরে অবৈধভাবে বালু
উত্তোলন করে কোটি কোটি টাকার বালু চুরি করছে। এতে রাজস্ব
থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। অর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি আমরা
বৈধ ইজারাদারগণ। বালু উত্তোলন বন্ধ করে বৈধ ইজারাদারকে
নির্বিঘ্নে ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ করে দিতে প্রশাসনের
জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন মোল্লা ট্রেডার্স ও মেসার্স
সরকার ট্রেডার্সের ব্যবসায়ী পার্টনারগণ।
এ ব্যপারে জানতে চাইলে লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ
জুলহাস হোসেন সৌরভ বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই।
আপনার মাধ্যমে জানলাম। স্থানটির তথ্য দিন আমি তাদের বিরুদ্ধে
দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।