logo

সময়: ০৫:৪৪, শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ০৫:৪৪ অপরাহ্ন

সর্বশেষ খবর

ইজিবাইক চোরচক্রের অন্যতম মূলহোতা মাসুদুর রহমান @ শামীমসহ ০৫ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০;

Ekattor Shadhinota
২৭ মার্চ, ২০২৪ | সময়ঃ ০২:২৬
photo
ইজিবাইক চোরচক্রের অন্যতম মূলহোতা মাসুদুর রহমান @ শামীমসহ ০৫ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০;

মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদীখান থানাধীন আব্দুল্লাহপুর চরেরগাঁও এলাকায় বসবাসকারী শুক্কুর (২৮), পিতা-ইসমাইল নামক একজন ইজিবাইক চালক সে দীর্ঘদিন যাবৎ মুন্সিগঞ্জের সিরাজদীখান ও ঢাকার কেরাণীগঞ্জসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় ইজিবাইক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল। প্রতিদিনের ন্যায় শুক্কুর তার ইজিবাইক নিয়ে যাত্রী পরিবহনকালে গত ২৭ ফেব্রæয়ারি ২০২৪ খ্রিঃ তারিখ আনুমানিক রাত ২২:৩০ ঘটিকায় ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানাধীন আব্দুল্লাহপুর এলাকা হতে অজ্ঞাতনামা দুইজন মোটরসাইকেল আরোহী শুক্কুরকে একই থানাধীন ঝিলমিল প্রকল্পের পার্শ্ববর্তী পাসপোর্ট অফিসের সামনে যাওয়ার কথা বলে শুক্কুরের ইজিবাইকটি ভাড়া করে তাদের সাথে থাকা অপর একজন সহযোগীকে উক্ত ইজিবাইকে উঠিয়ে দিয়ে তারা মোটরসাইকেল নিয়ে সেখান থেকে চলে যায়। অতঃপর ইজিবাইক চালক শুক্কুর অজ্ঞাত অপর ব্যক্তিকে নিয়ে ঝিলমিল প্রকল্পের পার্শ্ববর্তী পাসপোর্ট অফিসের সামনে পৌঁছালে সেখানে উক্ত দুইজন মোটরসাইকেল আরোহীদের দেখতে পায়। পরবর্তীতে তারা তিনজন একত্রিত হয়ে ইজিবাইক চালক শুক্কুরকে চাকু ঠেকিয়ে প্রাণনাশের হুমকিসহ বিভিন্ন প্রকার ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে তার ইজিবাইকটি ছিনিয়ে নিয়ে চলে যায়।

 উক্ত ঘটনার পর শুক্কুর তার উপার্জনের একমাত্র সম্বল ইজিবাইকটি হারিয়ে নিরুপায় হয়ে র‌্যাবের দ্বারস্থ হয়। শুক্কুর র‌্যাব-১০ এর অধিনায়ক মহোদয় বরারব তার ইজিবাইক চুরির ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগপত্র দায়ের করে এবং তার একমাত্র আয়ের উৎস চুরিকৃত ইজিবাইকটি দ্রæত উদ্ধারের জন্য আবেদন জানায়। উক্ত অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল ভিকটিম শুক্কুরের ইজিবাইকটি উদ্ধার ও ইজিবাইক চোর চক্রটিকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আশপাশের বিভিন্ন সিসি টিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে যাচাই-বাছাই করতঃ ছায়া তদন্ত শুরু ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

  গতকাল ২৬ মার্চ ২০২৪ খ্রিঃ তারিখ আনুমানিক রাত ১৯:০০ ঘটিকায় র‌্যাব-১০ উক্ত আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানাধীন মারুয়াদী চৌরাস্তা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে কুখ্যাত ইজিবাইক চোর চক্রের অন্যতম মূলহোতা ১। মোঃ মাসুদুর রহমান @ শামীম (৩৫), পিতা-মোঃ কবির হোসেন, সাং-কালিকাপুর, থানা-বেগমগঞ্জ, জেলা-নোয়াখালী ও তার প্রধান সহযোগী ২। মোঃ রাজিব হোসেন (৩৪), পিতা-মোঃ ফোরকান চৌকিদার, সাং-লামনা, থানা-গলাচিপা, জেলা-পটুয়াখালী’কে গ্রেফতার করে। এ সময় তাদের নিকট থেকে চুরির কাজে ব্যবহৃত ০২টি মোটরসাইকেল জব্দ ও চোরাইকৃত ০২টি ইজিবাইক, ০২টি স্পেয়ার চাকা ও ০২টি সাংবাদিকের ভূয়া আইডি কার্ড উদ্ধার করা হয়।

 গ্রেফতারকৃত শামীম ও রাজিবের স্বীকারোক্তি ও তাদের দেওয়া তথ্যমতে র‌্যাব-১০ উক্ত আভিযানিক দল একই তারিখ আনুমানিক রাত ২৩:১০ ঘটিকায় নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানাধীন পিচকামতাল মধ্যপাড়া এলাকায় অপর একটি অভিযান পরিচালনা করে ইজিবাইক চোর চক্রটির অপর ০৩ জন সদস্য ১। মোঃ আব্দুল মান্নান (৪০), পিতা-মোঃ আব্দুল জব্বার, সাং-চকবড়াইগাছী, থানা-নকলা, জেলা-শেরপুর, ২। মোঃ ইকবাল হোসেন (৪০), পিতা-মোঃ গিয়াস উদ্দিন ও ৩। মোঃ আব্দুল হান্নান (৪৫), পিতা-মোঃ আব্দুর, উভয় সাং-আনন্দনগর, থানা-বন্দর, জেলা-নারায়ণগঞ্জদের গ্রেফাতর করে। এ সময় তাদের নিকট থেকে চোরাইকৃত ০৩টি ইজিবাইক ও ০২টি স্পেয়ার চাকা উদ্ধার করা হয়।

  পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত হান্নান, ইকবাল ও মান্নানের দেওয়া তথ্যমতে র‌্যাব-১০ উক্ত আভিযানিক দল অদ্য ২৭ মার্চ ২০২৪ খ্রিঃ তারিখ আনুমানিক মাঝরাত ০০:৩০ ও ০১:৪৫ ঘটিকায় নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানাধীন কুড়িপাড়া ও পিচকামতাল এলাকায় অপর দুইটি অভিযান পরিচালনা করে চোরাইকৃত আরো ০৯টি ইজিবাইক ও ০৫টি স্পেয়ার চাকা উদ্ধার করে। এ সময় ইজিবাইক চোর চক্রটির অন্যান্য আসামিরা র‌্যাবের অভিযানের সংবাদ পেয়ে কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। উক্ত চক্রটির সাথে জড়িত পলাতক অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে র‌্যাবের অভিযান চলমান রয়েছে।


  প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত মাসুদুর রহমান @ শামীম ইজিবাইক চোর চক্রটির মূলহোতা। সে গ্রেফতারকৃত রাজিব, হান্নান, ইকবাল, মান্নান ও পলাতক অন্যান্য আসামিদের নিয়ে একটি ইজিবাইক চোরচক্র গড়ে তোলে। তাদের মধ্যে রাজিব উক্ত চোর চক্রের অন্যতম মূল হোতা মাসুদুর রহমান @ শামীমের প্রধান সহযোগী হিসেবে কাজ করত। রাজিব কখনও নিজেকে বিভিন্ন টিভি ও পত্রিকার সাংবাদিক আবার কখনও নিজেকে পুলিশের কর্মকর্তা পরিচয় দিত। শামীম ও রাজিব দুইজন মিলে মোটরসাইকেল সহযোগে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে তাদের টার্গেট ও স্থান নির্ধারণ করত। পরবর্তীতে তাদের নির্ধারিত টার্গেট (বিভিন্ন ইজিবাইক) ভাড়া করে তাদের পরিকল্পিত ও সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে গিয়ে বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রের মাধ্যমে প্রাণনাশের হুমকিসহ বিভিন্ন ভয়-ভীতি প্রদর্শন, কখনও চেতনানাশক ঔষধ ব্যবহার করে ভিকটিমদের অচেতন করে আবার কখনও সাংবাদিক ও পুলিশের পরিচয় দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে ভিকটিমদের ইজিবাইক ছিনতাই/চুরি করে নিয়ে পালিয়ে যেত। 

   পরবর্তীতে শামীম ও রাজিব ছিনতাই/চুরিকৃত বিভিন্ন ইজিবাইক হান্নানের কাছে ২০,০০০-৩০,০০০ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করত। হান্নান উক্ত ক্রয়কৃত ইজিবাইকগুলোর রং ও কাঠামো পরিবর্তন করে সেগুলো অন্যত্র ৪০,০০০-৫০,০০০ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করত। হান্নান মূলত ইকবালের মাধ্যমে উক্ত ইজিবাইকগুলো বিক্রয় করত। ইকবাল বিভিন্ন এলাকা হতে চুরিকৃত ইজিবাইক বিক্রয়ের সোর্স হিসেবে কাজ করত। মান্নান উক্ত ছিনতাই/চুরিকৃত ইজিবাইকের ক্রেতা। সে উক্ত ইজিবাইক ক্রয় করে অধিক মূলে আবার অন্যত্র বিক্রি করত বলে জানা যায়। 

  জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, তারা মাসুদুর রহমান @ শামীম নেতৃত্বে প্রায় ০২ বছর যাবৎ নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকা হতে ইজিবাইক চুরি করে আসছিল। এ তারা প্রতি মাসে বিভিন্ন এলাকা হতে ১০-১৫টি ইজিবাইক চুরি করত বলে জানায়। এক্ষেত্রে তারা তাদের নির্ধারিত টার্গেটকে ফাঁদে ফেলার জন্য নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অধিক ভাড়া দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে রাজি করতো। পরবর্তীতে তাদের পরিকল্পিত স্থানে পৌঁছামাত্র বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রের মাধ্যমে প্রাণনাশের হুমকিসহ বিভিন্ন প্রকার ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে ভিকটিমদের ইজিবাইক ছিনিয়ে নিতো বলে জানা যায়। 

  জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায় গ্রেফতারকৃত মোঃ রাজিব হোসেনের বিরুদ্ধে ০১টি ডাকাতি প্রস্তুতির মামলা রয়েছে।

  গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
 

শেয়ার করুন...

আরও পড়ুন...

ফেসবুকে আমরা…