প্রায় ৮ লাখ বেকার যুবক, নারী, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীসহ অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে ২০১৪ সালে যাত্রা শুরু করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের স্কিল্স ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (এসইআইপি)। প্রায় ১০ বছর ধরে বাস্তবায়িত এ প্রকল্পের প্রথম পর্যায় সফলভাবে সম্পন্ন করে সংশ্লিষ্টরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জনাব আব্দুর রউফ তালুকদার।
আগামী বছর জানুয়ারি থেকে প্রকল্পটির দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি।
রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের বলরুম-এ গতকাল মঙ্গলবার এসইআইপি আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা জানান গভর্নর। প্রকল্পটি তাদের সাফল্যকে তুলে ধরার জন্য গতকাল মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
গভর্নর জনাব আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘প্রথম থেকেই এসইআইপি প্রকল্পের সাথে আমি যুক্ত ছিলাম। ২০১৪ সালে প্রকল্পটি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করলেও প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু হয়েছে ২০১৩ সাল থেকে। উদ্দেশ্য ছিল একটি স্কিল্স ইকোসিস্টেম তৈরি করা। সেজন্য ছিল সফট সাইড ও হার্ড সাইড। সফট সাইডে আমরা কারিকুলাম ডেভেলপমেন্ট, কম্পিটেন্সি স্ট্যান্ডার্ড, অ্যাসেসর, প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণের (টিওটি) ব্যবস্থা করেছি। আর হার্ড সাইডে আগের ট্রেনিং সেন্টারগুলোর উন্নয়ন, নতুন ট্রেনিং সেন্টার তৈরি, ট্রেনিং ইক্যুপমেন্ট ও সামগ্রী প্রদান- এসব কাজ করেছি। এ ছাড়া আমরা পাবলিক-প্রাইভেট-ফিলানথ্রোপি পার্টনারশিপ ‘ফোর পি’ তৈরি করেছি। এর মাধ্যমেই আমরা প্রকল্পের কাজ শুরু করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রাইমারি লেভেলে যদি বেসিক স্কিল তৈরি করতে হয়, তাহলে অন্তত ৩৬০ মিনিটের ট্রেনিং দরকার। আমরা সেভাবেই শুরু করি। এ ছাড়া প্রকল্পটির আওতায় চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চারটি এক্সিকিউটিভ ডেভেলপমেন্ট সেন্টার শুরু করেছি। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল পুশ অ্যান্ড পুল ফ্যাক্টর তৈরি করা। প্রিমিটিভ লেভেলে যে ট্রেনিং দিয়েছি তা পুশ ফ্যাক্টর এবং ওপর লেভেলের ট্রেনিংগুলো পুল ফ্যাক্টর।’
এ প্রকল্পের সাথে যুক্ত অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, ‘১০ বছর পর এই প্রকল্প অত্যন্ত সফলভাবে শেষ হচ্ছে। এশীয় ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) নিজেরাই এটিকে ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্প বলে জানিয়েছে। আমি মনে করি, অর্থ বিভাগে আমার সহকর্মীরা অনেক পরিশ্রম করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এখানেই শেষ নয়, আমরা এ প্রকল্পের দ্বিতীয় ফেইজে যাচ্ছি। আশা করি আগামী জানুয়ারি থেকেই দ্বিতীয় ফেইজ শুরু হয়ে আরও ১০ বছর চলবে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এসইআইপি প্রকল্পের জাতীয় প্রকল্প পরিচালক ও অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার। প্রকল্পের নির্বাহী পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) জনাব ফাতেমা রহিম ভীনা’র স্বাগত বক্তব্যের মধ্যদিয়ে শুরু হয় মূল আনুষ্ঠানিকতা। বক্তব্যে প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের বিভিন্ন বিষয় ছাড়াও প্রকল্পের সাফল্য ও কৃতিত্ব তুলে ধরেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন, পরিকল্পনা বিভাগের সচিব জনাব সত্যজিত কর্মকার, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব জনাব মোঃ শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী এবং বিজিএমইএ’র সভাপতি জনাব ফারুক হাসান।
অনুষ্ঠানে “স্বপ্নের সোপানে সেইপ” ও “যুব দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক প্রতিবেদন” নামে এসইআইপি’র দুটি প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এসইআইপি প্রশিক্ষণের সাথে সংশ্লিষ্ট সেরা প্রশিক্ষক ও মডেল প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয় পুরস্কার। সেরা প্রশিক্ষক ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বক্তব্য শেষে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ১২ জন প্রশিক্ষণার্থী অনুষ্ঠানের মে অতিথিদের সামনে নিজেদের পরিচয় করিয়ে দেন স্কিল প্যারেড শো’র মাধ্যমে। নৈশভোজ ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে শেষ হয় আয়োজন।