logo

সময়: ০৩:৪৯, শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

১৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ০৩:৪৯ অপরাহ্ন

সর্বশেষ খবর

পার্বত্য মেলা: তারুণ্যের উৎসবে উদ্যাম

Ekattor Shadhinota
৩০ জানুয়ারী, ২০২৫ | সময়ঃ ০২:৩১
photo
পার্বত্য মেলা: তারুণ্যের উৎসবে উদ্যাম

দেশের মোট ভূ-খন্ডের এক দশমাংশ অঞ্চল জুড়ে আছে পার্বত্য চট্টগ্রাম। ২০২৪ জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশের পরিবর্তনের চাকা ঘূর্ণণের মাতোয়ারায় উদ্যমী পাহাড়ি তরুণ জনতা। সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে পাহাড়ি-বাঙালি সুসম্পর্ক বজায় রেখে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করে চলছে। জুলাই অভ্যুত্থানের নেতৃত্বের অগ্রভাগে ছিল তরুণ জনতা। বাংলাদেশের তরুণরা জেগেছিল, জেগে আছে এবং আবহমানকাল জেগে থাকবে। টগবগে এই তরুণ জনতা তারুণ্যের উৎসবে স্বাধীনতার সূর্য্যকে কখনো ম্লান হতে দিবে না এ বিশ্বাস সকলের। তারুণ্যের এ উৎসবে সামিল আছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনপদ।

 

এসো দেশ বদলাই, পৃথিবী বদলাই- সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে এখন সবাই সরব। টগবগে পাহাড়ি তরুণ যুবক ও জনতা তারুণ্যের উৎসবে দেশের উন্নয়ন ও পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় মিশে একাকার হওয়ার প্রয়াস চালাচ্ছে। পাহাড়ি তরুণরা শুধু জুম চাষ আর পুজা পার্বন উৎসবেই সীমাবদ্ধ নয়, সম্প্রীতির বন্ধনে পার্বত্য অঞ্চলের সৌন্দর্য্য বর্ধন, শিক্ষা, সংস্কৃতি, খেলাধুলা এবং রাজধানীর পার্বত্য মেলার বিস্তারকে ছড়িয়ে দিতে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের তারুণ্যের উৎসব পাহাড়ি জনপদের একটুকরো অংশকে উপহার দিতে চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি থেকে ০১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বেইলি রোডে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে পাহাড়ি-বাঙালিরা পার্বত্য মেলার পসরা সাজাতে ব্যস্ত।

 

উৎসবমুখর পরিবেশে পার্বত্য মেলা ও তারুণ্যের উৎসব-২০২৫ উদযাপিত হচ্ছে। উল্লেখ্য যে, ৩০ তারিখ সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত অবিরাম মেলার কার্যক্রম চলবে। স্টল নির্মাণের কাজ চলছে। এবারের মেলা প্রাঙ্গনকে স্বাস্থ্যসম্মত ও আকর্ষণীয় করতে রেডলাইন মিডিয়া পুরো মেলা প্রাঙ্গনে প্লাস্টিক পণ্য বর্জন করেছে। মেলায় থাকছে ইন্টেরিয়র ইকো মেটেরিয়াল এর ব্যবহার। বাঁশ, বেত ও ছনের ৮১টি স্টলকে নান্দনিকভাবে সাজানো হয়েছে। মেলা প্রাঙ্গনে থাকছে দুটি ফুড এক্সপো। আরও থাকছে আর্ট এক্সিবিশন, জুমঘর, ফটোবুথসহ আরও অনেক কিছু। তারুণ্যের এ মেলায় সবাই আমন্ত্রিত। পাহাড়ি-বাঙালির মিলন মেলায় পরিণত হবে এ মেলা। আপ্যায়নে পাহাড়ি খাবার মেন্যুতে থাকবে বৈচিত্র্যতা। এছাড়াও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলবে।

 

বাংলাদেশের খাদ্য সংস্কৃতি বৈচিত্র্যময়। ভৌগোলিক গঠন এবং বিভিন্ন অঞ্চলের খাদ্য সংস্কৃতি আমাদের খাদ্যাভ্যাসকে করেছে সমৃদ্ধ। এর মধ্যে পার্বত্য অঞ্চলের খাবার এক ব্যতিক্রমী খাদ্যভাণ্ডার হিসেবে দখল করে আছে। পার্বত্য অঞ্চলের খাবারে প্রকৃতির সান্নিধ্য এবং সহজলভ্য বিভিন্ন খাদ্যের উপাদান পাহাড়ি খাদ্যভাণ্ডারকে সৃজনশীল করেছে। পাহাড়ি প্রকৃতি, আবহাওয়া, পাহাড়, পর্বত, নদী-ঝর্ণা, লতাপাতার গুল্ম, শাকসবজি, ফল-ফলাদি, সবুজ বৃক্ষের সজীবতা এবং স্থানীয় ঐতিহ্যের মিশ্রণ এ অঞ্চলকে সমতল থেকে করেছে আলাদা।

 

পার্বত্য এলাকার মানুষজন মাছ, মাংস, শাকসবজি, ফলমূল, শুঁটকি, এবং বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক উপাদান মিশ্রিত মশলা দিয়ে পুষ্টিকর, স্বাস্থ্যসম্মত এবং স্বাদে অতুলনীয় রসনা বিলাস খাবার তৈরি করে থাকে। এই খাদ্যসম্ভার আমাদের মুগ্ধ করে এবং স্বাদের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। পার্বত্য মেলায় পাহাড়ি ব্যবস্থাপনায় বিশাল আয়োজনে রাজধানীবাসীসহ সকলের জন্য থাকছে তুলশিমালা চালের চিকেন বিরিয়ানি। এর সুগন্ধী মেলায় আগতদের মাতোয়ারা করে তুলবে। সেসাথে থাকছে সান্নী পিঠা, কলা পিঠা, কালো বিন্নি চালের পিঠা, লাড্ডু, সিস্টেম, খাংময়, ব্যাম্পো সুট, ইজোর ইত্যাদি। সেদ্ধ শাক ভর্তায় পরিপূর্ণতা আনবে। ঢেকি শাক সেদ্ধ, ফুলকপি সেদ্ধ, সেদ্ধ সিম ইত্যাদির সাথে মরিচ, সিদল শুটকি, ধনে পাতা, পেঁয়াজ, লবণ মিশ্রণে ভর্তা তৈরি করা থাকবে মেলাতে। ভর্তা প্রেমিদের সুটকি বড়া পিঠা, হলুদ ফুলের ভর্তা সারাক্ষণ মাতিয়ে রাখবে। পাহাড়ি ফলের তুলনা হয় না। আম, কলা, পেপে, আনারস মেলার ভোজন রসিকদের রসনার আকর্ষণকে বাড়াবেই। মেলায় আগত অতিথিদের জন্য থাকছে সুপেয় আখের রস। স্বাদে ভরপুর খাবারের পাশাপাশি মেলায় আছে পাহাড়িদের নিজস্ব তৈরি পোশাক পরিচ্ছদ। পাহাড়ি নারীদের হাতে বুনন পিনোন-হাদি শাড়ি সকল নারীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। যার চাহিদা মেটাতে পর্যাপ্ত রয়েছে এবারের পার্বত্য মেলায়। মেলার স্টলগুলোতে সাজানো থাকবে ঐতিহ্যবাহী পাহাড়ি সংস্কৃতির বুনন শিল্পের ছোট-বড় সবার জন্য নানান বাহারি পোশাক। নকশি করা পাহাড়ি জনগোষ্ঠীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক, নিজস্ব ডিজাইন করা পোশাক, টেক্সটাইল পণ্য ও হস্তশিল্প পণ্যগুলো সবধরনের ক্রেতাদের আকর্ষিত করবে। ক্রেতারা এখানে তাদের সাধ্যিমতো তাদের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে পারবেন।

 

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, যাদের খাদ্যে অ্যালার্জি, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে, তারা ডাক্তারের পরামর্শ মতে জেনে বুঝে পার্বত্য মেলার রসনা বিলাসিতায় অংশ নিবেন। পাহাড়ি এ ধরনের খাবার প্রকৃতি ও পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়া পার্বত্য এলাকার মানুষগুলো অভ্যস্ত আছে। প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি এসব খাবার সুস্বাদু, পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যসম্মত। পাহাড়ি এসব খাবার রসনা বিলাস এর পরিপূর্ণতা দিবে। বৈচিত্র্যময় মেলাটি তারুণ্যের উৎসবে পরিণত হবে।

শেয়ার করুন...

আরও পড়ুন...

ফেসবুকে আমরা…