বিশেষ প্রতিনিধি ঃ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, সুইডেন প্রবাসী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক মুনির হামজা এক বিবৃতিতে বলেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম বাংলাদেশের একজন খ্যাতনামা বীর মুক্তিযোদ্ধা। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বাঘা সিদ্দিকী নামেও ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছেন।
তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় কাদেরিয়া বাহিনী নামে একটি গেরিলা বাহিনী গড়ে তুলেন এবং পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেন। তিনি একাত্তরের ১৬ই ডিসেম্বর হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পনের সময়ও রেসকোর্স ময়দানে উপস্থিত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে কাদের সিদ্দিকির বীরত্বপুর্ন ভুমিকার জন্য বঙ্গবন্ধু খুশী হয়ে তাকে ১৯৭৫ সালে টাংগাইল জেলার গভর্ণর হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকি একমাত্র বীর বাংগালী যিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার কঠোর প্রতিবাদ করেছিলেন। এ্ই প্রতিবাদ করতে গিয়ে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার আক্রমনে তার নেতৃত্বাধীন গেরিলা বাহিনীর অগনিত গেরিলা নিহত হয়। শেরপুর সীমান্ত এলাকায় পুলিশ, বিডিআর ও সেনাবাহিনীর এক যৌথ হামলায় কাদের সিদ্দিকীর অনুগত প্রায় দুইশত গেরিলা বাহিনীর সদস্যরা নিহত হয়। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দীকি কোন রকমে দেশ ত্যাগ করে ভারতে গিয়ে জীবন বাঁচান। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসেও বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকির অনুগত নিহত গেরিলাদের খোজখবর নেয়নি। এমনকি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীও তাদের ত্যাগের কথা হয়তো ভুলে গেছেন।
তিনি বলেন, কাদের সিদ্দিকী শুধু প্রতিবাদ করেই খান্ত হন নাই, দেশ ত্যাগ করে ভারতে গিয়ে দীর্ঘ ১৬ বছর নির্বাসনে কাটান এবং বাংলাদেশে স্বৈরাচারী সামরিক সরকারের পতনের লক্ষ্যে কাজ করেন। তার জীবনের এ অপরিসীম ত্যাগ ও বীরত্বের কথা জাতি কখনও ভুলবে না। তবে, তিনি ১৯৯০ সালে ভারত থেকে বাংলাদেশে এসে কিছু কিছু রাজনৈতিক কর্মকান্ডের দ্বারা বিতর্কিত হয়ে পড়েছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একান্ত সৈনিক এবং বঙ্গবন্ধুর মানষপুত্র দাবী করা সত্বেও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মুল ধারায় অবস্থান করতে পারেননি। এমনকি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে বড় বোন হিসেবে দাবী করেও তার আস্থাবাজন হয়ে থাকতে পারেননি। এটা তার জীবনে সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা বলে আমি মনে করি।
মুনির হামজা বলেন. যাই হোক বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দীর্ঘসময় অতিবাহিত করেছেন। ১৯৭৫ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এই দর্ঘিসময় তিনি দেশের জন্য কোন কাজ করতে পারেন নাই। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করার ফলে কাদের সিদ্দিকী কাজ করার কোন সুযোগ পান নাই। তিনি ষোলটি বছর ভারতে নির্বাসিত জীবন কাটান। তবে তিনি জীবনের মুল্যবান সময় রাজনৈতিকভাবে বার বার ভুল পদক্ষেপ গ্রহন করায় জনগনের সেবা করার সুয়োগ হারিয়েছেন। তিনি মুখে মুখে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একান্ত সৈনিক বা তার মানষপুত্র হিসেবে দাবী করলেও তিনি কখনও বিএনপি’র দালালী আবার কখনও জামায়াতের নয়া দিগন্ত পত্রিকায় কলাম লিখে বিতর্কিত হয়েছেন। ২০১৮ সালে তার মেয়ে ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে নির্বাচন করেছেন্। ব্যাংক লোন পরিশোধ না করার কারনে তার মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় তিনি নির্বাচনে অংশ গ্রহন করতে পারেন নাই। মনোনয়ন বাতিল না হলে ধানের শীষ প্রতিক নিয়েই নির্বাচন করতেন তিনি। আসলে কাদের সিদ্দিকী নীতিভ্রষ্ট একজন মানুষ।তার জীবনে বড় ভুল তিনি আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন। গামছা লীগ নামে এ দল ঘঠন করে জনগনের জন্য কিছুই করতে পারেন নাই। শুধু সময় ক্ষেপন করেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত কোথাও সুবিধা করতে না পেরে কাদের সিদ্দিকী প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করেছেন। আশা করি তার শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। তবে তিনি সম্প্রতি শাজাহান খান, মতিয়া চৌধুরী এবং ইনু সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করে পুনরায় বিতর্কের সৃর্ষ্টি করেছেন। তিনি একথাটাও বুঝেন না যে, রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছু নেই। অন্য কোন দলের নেতাকর্মিগন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোজদান করতে পারবে না এ কথা তো আওয়ামী লীগের দলীয় সংবিধানে লেখা নেই। তাছাড়া যে কোন দলের নেতাকর্মি যদি ভুল স্বীকার করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদান করে জনগনের কল্যানে কাজ করে এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করে তাতে আপত্তি কোথায়? এ বিষয়ে কাদের সিদ্দিকী সমালোচনা করার কে? বর্তমান সময় শাজাহান খান ও মতিয়া চৌধুরীর যথেষ্ট ত্যাগ ও ভুমিকা রয়েছে। এ বিষয়ে কাদের সিদ্দিকীর সমালোচনাকে কেউ ভালো চোঁখে দেখে না।
মুনির হামজা বলেন, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী টাংগাইল জেলা আওয়ামী লীগের প্রবীন ও জনপ্রিয় নেতা টাংগাইল জেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের সাধারন সম্পাদক, সভাপতি ও সংসদ সদস্য জনাব ফজলুপ রহমান ফারুক সাহেবের সম্পর্কেও সমালোচনা করতে ছাড় দেন নাই। ফলে, কাদের সিদ্দিকীর ভাবমুর্তি নষ্ট হচ্ছে। এসব বিতর্কিত বক্তব্য না দিয়ে তাকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে, গলার গামছা কোমরে বেঁধে, নৌকার বৈঠা কাঁধে নিয়ে মাঠে নামতে হবে, জনগনের পাঁশে দাড়াতে হবে এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে। আমাদের গোপালপুর ও ভুয়াপুরের স্থানীয় এমপি জনাব ছোট মনির তরূন প্রজন্ম আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, কৃষকলীগ ও ছাত্রলীগকে সঙ্গে নিয়ে গামছা কোমরে বেঁধে ক্ষেতের ধান কেঁটে কৃষকের ঘরে তুলে দিয়েছেন। বুঝতে হবে, জননেত্রী শেখ হাসিনা চান, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মিদের জনগনের পাঁশে থাকতে হবে। এমপি ছোট মনির বিপদে-আপদে জনগনের পাঁশে থাকায় জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন।
এখানে উল্লেখ্য, টাংগাইল জেলার অন্তর্গত গোপালপুর উপজেলায় এক সম্ভান্ত পরিবারে এলাকার বিশিষ্ট কৃতিসন্তান মরহুম আলহাজ্ব মাওলানা মোহাম্মদ তৈয়বউদ্দিন দেওবন্দী জন্মগ্রহন করেন।একাত্তরের মুক্তিযুদ্দের স্বপক্ষে মাওলানা তৈয়বউদ্দিন সাহেবের ব্যপক ভুমিকা রয়েছে। ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ গভীর রাতে রাজধানী ঢাকায় পাকিস্তান হানাদার বাহিনী কর্তৃক বিডিআর, পুলিশ ও ঢকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রজনত্ াসহ নীরিহ জনগনকে নির্বিচারে হত্যার প্রতিবাদে মাওলানা তৈয়বউদ্দিন সাহেব গোপালপুর মসজিদের মাইকে ঘোষনা দিয়ে জনগনকে জড়ো করে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহবান জানিয়েছিলেন। মাওলানা সাহেবের মেঝ ছেলে এডভোকেট সামসুল আলম, ততকালিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ এইচ হলের ছাত্রলীগ সভাপতি এবং তৃতীয় ছেলে আশরাফুল আলম একাত্তরের মুক্তিযুদ্দে সক্রীয়ভাবে অংশ গ্রহন করেন। এমনকি মাওলানা সাহেবের ৪র্থ ছেলে দশ বছর বয়স্ক আনোয়ারুল আলমও কিশোর মুক্তিযোদ্দা হিসেবে যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন। এডভোকেট সামসুল আলম গোপালপুরের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হিসেবে দায়ীত্ব পালন করেন। একজন শিক্ষক ও ইমাম হিসেবে মাওলানা তৈয়বউদ্দিন সাহেবের উদ্যোগে আরো অনেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ব্যপক ভুমিকা রাখার কারনে একাত্তরের ১৫ই জুন মাওলানা সাহেবের বাড়ীতে রাজাকাররা হামলা চালায় এবং সর্বস্ব লুট করে নিয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন এক সময় রাজাকাররা মাওলানা সাহেবকে পাকিস্তানী সেনাদের হাতে তুলে দেয়। তবে তিনি একজন জনপ্রিয় আলেম এবং উর্দু ভাষায় পারদর্শিতার কারনে মুক্তি পান। ১৯৭১ সালের ১৫ই ডিসেম্বর এডভোকেট সামসুল আলমের নেতৃত্বে গোপালপুর শত্রুমুক্ত হয় এবং বিজয় লাভ করে। স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার প্রতিবাদে তিনি ঢাকা ছেড়ে গোপালপুরে চলে আসেন এবং দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের দুঃসময় গোপালপুর থানা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারী ও সভাপতির দায়ীত্ব পালন করেন।
এখানে উল্লেখ্য, মাওলানা তৈয়বউদ্দিন সাহেবের কনিষ্ঠ ছেলে গোপালপুরের কৃতিসন্তান মুনির হামজা (৫৩) ইসলামী বিম্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, সুইডেন প্রবাসী একজন সফল ব্যবসায়ী ও বিশিষ্ট সমাজসেবক।তিনি বাংলাদেশে স্বৈরাচারী সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনে ঢাকায় ব্যপক ভুমিকা রাখেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশে অবস্থান কালে টাংগাইল গোপালপুর ও ভুয়াপুর এলাকায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন। তিনি প্রবাসে থেকেও পত্র-পত্রিকা ও সোসাল মিডিয়ায় প্রচুর লেখালেখি করেন এবং প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রাখেন। তিনি এলাকায় মসজিদ-মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অনুদান দিয়ে থাকেন। তিনি ব্যক্তিজীবনে কঠোর পরিশ্রমী, ধার্মিক, ত্যাগী,সৎ, আন্তরিক,মানবদরদী ও রাজনৈতিক দুরদৃষ্টি সম্পন্ন একজন মানুষ হিসেবে সকলের কাছে সুপরিচিত। এখানে উল্লেখ্য, মরহুম মাওলানা তৈয়বউদ্দিন সাহেবের পরিবার ও বংশধরদের প্রায় চল্লিশ জন লোক সুইডেনে বসবাস করেন।