logo

সময়: ০২:২৫, শনিবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৫

৮ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ০২:২৫ অপরাহ্ন

সর্বশেষ খবর

কুবিতে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদযাপন

Ekattor Shadhinota
০৫ আগস্ট, ২০২৫ | সময়ঃ ১০:২০
photo
কুবিতে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদযাপন

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তি উদযাপিত হয়েছে।  সকাল ১০ টায় মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হায়দার আলী’র নেতৃত্বে বিজয় র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বর থেকে শুরু হয়ে প্রধান ফটক প্রদক্ষিণ করে মুক্তমঞ্চে এসে শেষ হয়। এরপর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে কেক কাটা হয়।

তারপর এগারোটার দিকে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে শুরু হয় আলোচনা সভা। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হায়দার আলী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সোলায়মান, রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন এবং প্রক্টর প্রফেসর ড. মোঃ আবদুল হাকিম। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল।

আলোচনা সভার শুরুতে জুলাই যোদ্ধারা বক্তব্য প্রদান করেন। এসময় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংকট নিরসনের জন্য দাবি জানান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হায়দার আলী বলেন, 'স্বৈরাচারের মাথাটা পালিয়ে গেছে, বডিটা এখনো আছে। এই বডির যন্ত্রণা প্রতি পদে পদে ভোগ করতে হচ্ছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ও এর ব্যতিক্রম নয়। এখানেও রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি আছে, গোপনে দুর্নীতি হচ্ছে। আমরা বুঝতে পারছি কিন্তু ধরতে পারছি না।'

তিনি আরও বলেন, 'শিক্ষক একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের কালচারকে পরিবর্তন করতে পারে, শিক্ষক একটা বিশ্ববিদ্যালয়কে ভালো মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করতে পারে। ০৫ আগস্টের পর কিছু অর্জন করতে না পারলেও এইটুকু তো অর্জন করতে পেরেছি যে, দাঁড়িয়ে বুক উঁচু করে কথা বলতে পারছি। ৫ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক দিন, যেদিন জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে স্বৈরশাসকের পতন ঘটে। ৫ আগস্টের চেতনা ধরে রেখে দুর্বলরাও যে পরিবর্তন আনতে পারে, তা প্রমাণ করবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।'

বিশেষ অতিথি মাননীয় ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন,  '৫ আগস্টের আগে ও পরে মত প্রকাশের স্বাধীনতার যে পার্থক্য, তা রক্ত দিয়ে অর্জিত। তাই আমাদের ‘জুলাইকে ধারণ করতে হবে। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে নিজেকে পরিবর্তন করতে হবে এবং নিজের আদর্শ সমাজে ছড়িয়ে দিতে হবে, যেমনটি আবু সাঈদ করেছিলেন। যদি আমরা চেতনায় বিচ্যুৎ হই বা দলীয় প্রভাবে পরিচালিত হই, তবে সেই বিচ্যুতির জন্য আমরাই দায়ী থাকবো।'

তিনি আরও বলেন,  'বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন ফ্যাসিবাদ আগে কখনও জন্ম নেয়নি। যদি সেই স্বৈরাচার পলায়ন করতে বাধ্য হয়, তবে আমরাই বা কতদিন টিকে থাকবো? আমি চাই, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় স্বগৌরবে এগিয়ে যাক। তবে আমাদের স্বাদ থাকলেও সাধ্যের সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যা কেবল একটি বক্তৃতায় নয়; বরং ধারাবাহিক পরিবর্তনের মাধ্যমেই সম্ভব।

রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, 'আজকের জুলাই বিপ্লব একদিনে সংগঠিত হয়নি। এটি গত ১৭ বছরের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। যারা এই বিপ্লবে আত্মাহুতি দিয়েছে তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি আর যারা আহত হয়েছে তাদের সুস্থতা কামনা করছি। তাদের কারণেই আজকের এই দিনটা আমরা পেয়েছি। তারা বৈষম্য ও দুর্নীতি দূর করার জন্য, ন্যায়ের পক্ষে থাকার জন্য তাদের জীবনের আত্মাহুতি দিয়েছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমরা তাদের আত্মত্যাগ ভুলে গিয়েছি। আমাদের উচিত যার যার জায়গা থেকে আমাদের এই বাংলাদেশেকে দুর্নীতিমুক্ত ও বৈষম্যহীন করতে সোচ্চার হওয়া।'

বিশেষ অতিথির বক্তবে প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুল হাকিম বলেন, '৫ আগস্টের পরে যে পরিবর্তনের কথা বলা হচ্ছে পরিবর্তনটা আসলে কোথায়? এখনও পাসপোর্ট অফিস বা রেজিস্ট্রি অফিসে গেলে ঘুষ দিতে হয়। ৫ আগস্টের আন্দোলনের মূল প্রতিপাদ্য ছিলসমাজ ও রাষ্ট্রে বৈষম্য থাকবে না। কিন্তু বাস্তবতায় কি বৈষম্য বিলীন হয়েছে? আসলে রাষ্ট্র থেকে বৈষম্য উঠে যায়নি, শুধু এর পদ্ধতি বদলেছে। চাঁদাবাজি এখনো শেষ হয়নি, শুধু ধরণটা পাল্টেছে।'

 অনুষ্ঠানের সভাপতি ও মাননীয় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল বলেন, 'আজকের দিনটি ৩৬ই জুলাই বা ৫ই আগস্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই দিনে ১৬ বছর ধরে চলা একনায়কতান্ত্রিক শাসনের পতন ঘটে। যাঁরা এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে আত্মত্যাগ করেছেন তাঁদের প্রতি আমি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি এবং তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। যারা আহত হয়েছেন ও পঙ্গুত্ববরণ করেছেন তাঁদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এছাড়াও আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সবাইকে জানাই সম্মান ও অভিনন্দন। বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতি, যাঁরা এই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। জুলাই বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে বৈষম্যহীনতা প্রতিষ্ঠা, যার মাধ্যমে একটি শোষণমুক্ত সমাজ গড়ে তোলাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। আমরা ছিলাম শোষণের জাতাকলে পিষ্ট।'

আলোচনা সভা শেষে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের জুলাই আহতদের সম্মাননা প্রদান করা হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবাদী সংগঠন অভয়ারণ্যের উদ্যোগে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতায় ৩৬টি বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। সর্বশেষ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ৫৬টি আলোকচিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষ হয়।

উল্লেখ্য, বিকাল পাঁচটায় গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

শেয়ার করুন...

আরও পড়ুন...

ফেসবুকে আমরা…