মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী: চলছে মধুমাস। রাজশাহীর হাটে-বাজারে
মাঠে-ঘাটে দেখা মিলে আম, কাঁঠাল, লিচু, জাম, পেয়ারা, জামরুল, তালসহ
নানা ধরনের ফল।
তবে সবকছিুকে ছাড়িয়ে রাজশাহীতে আলোচনায় উঠে
আসে রসালো ফল আম আর লিচুর নাম। যদিও এবার ফলন নিয়ে শঙ্কা আছে
কৃষকদের মাঝে। তবে লিচুতে আশার আলো দেখছেন চাষিরা। আবহাওয়া
অনুকূলে থাকায় এবার লিচুর ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বেশি। যদিও
আমের তুলনায় অর্ধেকও চাষ হয় না লিচু। তার পরেও যতটুকু চাষ হয়, তাতেই
এবার লিচু বাড়তি রস ছড়াবে বলে আশায় বুক বাধছেন চাষিরা। রাজশাহীর
লিচু আগামী ১২-১৫ দিনের মধ্যেই বাজারে আসতে শুরু করবে বলে
জানিয়েছেন চাষিরা।
মতিহার থানার কাজলা এলাকার চাষি মোঃ কজিম বলেন, ‘এবার প্রচুর
পরিমাণে মুকুল ঝরে যাওয়ায় আমে খুব একটা লাভ হবে না। তবে লিচুতে
এবার ভালো লাভ হবে। ফলন গতবারের চেয়ে এবার বেশি হবে বলে আশা করা
যাচ্ছে।
তিনি আরও জানান, তার প্রায় ২০টি লিচু গাছ আছে। প্রতিটি গাছেই
বাম্পার লিচু এসেছে। আগামী ১২-১৫ দিনের মধ্যেই গাছ থেকে পাড়া
যাবে আঁঠি (দেশি) জাতের লিচুগুলো। এই জাতের লিচুগুলো একটু খেতে
টক হয়। তার পরেও রসালো ফল লিচুর চাহিদা ব্যাপক থাকায় আঁঠি জাতের
লিচুও রাজশাহীর বাজারে ২৫০ টাকার নিচে পাওয়া যায় না। শুরুতেই এই
লিচু বাজারে আসে। এর পর আসে বোম্বাই জাতের বা চায়না-৩ ও মাদ্রাজি
জাতের লিচুগুলো। তবে বোম্বাই জাতের লিচুগুলো বাজারে আসতে আরও মাস
খানেক দেরি হবে।
জেলার পুঠিয়া উপজেলার নামাজগ্রামের চাষি আনছার আলী বলেন, ‘এবার
লিচু ভালো হয়েছে। আশা করি ফলনও ভালো হবে। প্রতিটি মাঝারি গাছ
থেকে তিন-চার হাজার পরিমাণ লিচু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যা ওজন করলে
দাঁড়াবে দেড় থেকে দুইশ কেজি। তবে লিচু সংখ্যা হিসেবে বিক্রি হওয়ায়
চাষিরা ওজনকে গুরুত্ব দেয় না।
তিনি আরও জানান, একটা মাঝারি মাণের গাছে তিন হাজার লিচু হলেও
কমপক্ষে গড়ে সাত থেকে আট হাজার টাকা দাম পাওয়া যাবে। তবে বোম্বাই
জাতের লিচু গাছ থেকে আরও বেশি পাওয়া যাবে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র মতে, চলতি বছর রাজশাহীতে ৫৩০
হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছে। এখান থেকে প্রায় তিন হাজার ৮০০
মেট্রিক টন লিচুর উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে
বেশি বাগমারা উপজেলায় ১১৫ হেক্টর জমিতে লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা প্রায়
৮২৫ মেট্রিক টন। এ ছাড়াও রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায় ৭৮ হেক্টর, পবা
উপজেলায় ৭৫ হেক্টর, দুর্গাপুর ৭০ হেক্টর, মোহনপুরে ৫২ হেক্টর, চারঘাটে ৪৫
হেক্টর, তানোর উপজেলায় ৩০ হেক্টর, বাঘা উপজেলায় ২৮ হেক্টর, মতিহারে ২০
হেক্টর ও গোদাগাড়ী উপজেলায় ১৯ এবং রাজশাহী নগরীতে ১০ হেক্টর জমিতে
লিচু চাষ হয়েছে। যদিও একটি পরিপক্ক লিচু গাছ হতে ৫-৬ বছর সময় লাগে।
তার পরেও বার্ষিক লিচু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ও উৎপাদন আনুমানিক হিসেব করে
কৃষি বিভাগ।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র আরও জানায়, গত কয়েক বছর ধরে
রাজশাহীতে লিচু চাষ বাড়ছে। ২০১৬-১৭ মৌসুমে জেলায় মোট লিচুর চাষ
হয়েছিল ৪৮৯ হেক্টর জমিতে। এতে উৎপাদন হয়েছিল ২ হাজার ৫১০ মেট্রিক
টন। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে লিচুচাষ বাড়ছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোছা. উম্মে ছালমা
বলেন, রাজশাহীর লিচু স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয় হওয়ায় দেশজুড়েই এখানকার
লিচুর চাহিদা রয়েছে। আবার এ জেলার লিচু একটু আগেই বাজারে আসে।
ফলে বাজারে চাহিদা তখন আরও বেশি থাকে। এবার লিচু ভালো হওয়ায় চাষিরা
লাভবান হবেন বলে আশা করা যাচ্ছে বলেও জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।