করলা তেতো হলেও পুষ্টিগুণ অশেষ। ঠিকঠাক রান্না করতে পারলে এই তেতোস্বাদও অমৃত হয়ে ওঠে।
তবে করলার তেতোভাবটাই অনেকে পছন্দ করেন। আবার এমনভাবেও রান্না করা যায়, যাতে তেতোভাবটা কমে আসে অনেকখানি। স্বাদ বদলের জন্য কিছুটা ভিন্নতাও আনা যেতে পারে করলা রান্নায়।
মুচমুচে করলা ভাজিঃ
উপকরণ
পাতলা গোল করে কাটা করলা ২ কাপ, আলু (পাতলা গোল করে কাটা) ২ কাপ, বেরেস্তা আধা কাপ, কাঁচা মরিচ ৪টি, লবণ দেড় চা-চামচ ও গোলমরিচ গুড়া সিঁকি চা-চামচ।
প্রণালি
করলায় লবণ মেখে ২০ থেকে ৩০ মিনিট রেখে দিন। করলা ধুয়ে পানি নিংড়ে আলাদা পাত্রে রাখুন। আলু কেটে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। ভাজার আগে পানি ঝরিয়ে নিন। আলাদা পাত্রে করলা ও আলুতে লবণ মাখিয়ে রাখুন। ডুবোতেলে ভাজার জন্য কড়াইতে তেল গরম করুন। প্রথমে আলু তারপর করলা ভেজে মুচমুচে করে নিন। এবার তেল ছেঁকে উঠিয়ে আলাদা আলাদা পাত্রে কিচেন টাওয়েলে রাখুন, এতে বাড়তি তেল কিচেন টাওয়েল শুঁষে নেবে।
প্রথমে মাঝারি আঁচে তারপর আঁচ কমিয়ে ভাজতে হবে। চুলা বন্ধ করে তারপর এই তেলে চুলা বন্ধ অবস্থাতেই কাঁচা মরিচগুলো ছেড়ে দিতে হবে। ৫ মিনিট পর তেল ছেঁকে উঠিয়ে ফেলুন।
এবার একটি বড় বোলে মুচমুচে করলা, আলু, ভাজা কাঁচা মরিচ ও গোলমরিচ গুঁড়া দিয়ে মিশিয়ে পরিবেশন পাত্রে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
ডিম-করলার স্যুপঃ
উপকরণ
হাড়সহ ২৫০ গ্রাম মুরগির মাংস দিয়ে তৈরি করা স্টক ৫ কাপ, পাতলা করে কাটা করলা ২৫০ গ্রাম, মুরগির বুকের মাংস পাতলা কাটে ১০০ গ্রাম, ফিশ বল ১০টি, ফেটানো ডিম ১টি, লবণ আধা চা-চামচ, তিলের তেল ২ চা-চামচ ও গোলমরিচ গুঁড়া আধা চা-চামচ।
প্রণালি
পাঁচ কাপ পানিতে হাঁড়সহ মুরগির মাংস চুলায় চাপিয়ে ঢেকে আধা ঘণ্টা জ্বাল দিয়ে স্টক করে নিন।
করলা ধুয়ে বিচি ফেলে দিয়ে লবণ মেখে রেখে দিন। একটি বাটিতে মুরগির মাংস, লবণ, তিলের তেল ও গোলমরিচ গুঁড়া দিয়ে মিশিয়ে মেখে রেখে দিন কিছুক্ষণ। এবার চিকেন স্টক থেকে মুরগির হাঁড়গুলো উঠিয়ে স্টকে মেখে রাখা মুরগির মিশ্রণ দিয়ে ২ থেকে ৩ মিনিট জ্বাল দিন। তারপর লবণ দিয়ে মেখে রাখা করলা চিপড়ে পানি নিংড়ে ভালো করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে স্যুপে দিয়ে রান্না করুন কিছুক্ষণ। ২ থেকে ৩ মিনিট পর ফিশবল দিয়ে তারপর ফেটানো ডিম দিয়ে নাড়ুন। লবণ দেওয়ার প্রয়োজন হলে এক চিমটি লবণ দিয়ে নাড়ুন। ১ থেকে ২ মিনিট পর নামিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।
স্টাফড করলাঃ
উপকরণ
মাঝারি করলা ৪টি, লবণ স্বাদমতো, মুরগির কিমা ১ কাপ, পেঁয়াজ পাতলা করে কাটা ১ কাপ, কাঁচা মরিচ কুচি ৩-৪টি, ঝুরি করা পনির আধা কাপ, গরম মসলার গুঁড়া আধা চা-চামচ, গোলমরিচ গুঁড়া সিঁকি চা-চামচ, আদা বাটা আধা চা-চামচ, রসুন বাটা আধা চা-চামচ, চিনি আধা চা-চামচ, তেল ৩ টেবিল চামচ, কুচানো ক্যাপসিকাম পরিমাণমতো ও পুদিনা পাতা কুচি ২ টেবিল চামচ।
প্রণালি
করলা ধুয়ে দুই মুখের ধার একটু বেশি করে কেটে একেকটিকে তিন ভাগ করে নিন। ভেতরের বিচি ও শ্বাস চামচ বা পিলার দিয়ে কুরিয়ে বের করে নিন। সাবধানে কোরাতে হবে, যেন ভেঙে না যায়।
এখন করলার ভেতরে ও বাইরে আধা চা-চামচ লবণ মেখে ২০ মিনিট রেখে দিন। করলা ভালো করে ধুয়ে পানি শুষে নেওয়ার জন্য কিচেন টাওয়েলে রাখুন। কড়াইতে সাদা তেল গরম করে তাতে পেঁয়াজ সোনালি করে ভেজে অল্প লবণ দিয়ে সেদ্ধ করা কিমা কিছুক্ষণ ভেজে নিন। মাংসের রং পরিবর্তন হয়ে এলে তাতে সিরকা, চিনি ও আদা-রসুন বাটা দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে নিন। এবার জিরা বাটা, গোলমরিচ গুঁড়া দিয়ে ভালো করে কষিয়ে নিন। কাঁচা মরিচ কুচি দিয়ে নেড়ে ভাজা ভাজা করুন। তারপর গরম মসলা গুঁড়া দিয়ে নেড়ে অর্ধেক ঝুরি করা পনির মিশিয়ে দিয়ে নেড়ে চুলা বন্ধ করে দিন।
সামান্য লবণ মিশিয়ে করলার টুকরাগুলো একটু ব্লাঞ্চ করে নিন। বেকিং ট্রেতে সরিষার তেল ব্রাশ করে ২ ইঞ্চি দূরে দূরে ভাপিয়ে নেওয়া করলাগুলো বসিয়ে তার ভেতরে ১ টেবিল চামচ মাংসের কিমা দিয়ে ভালো করে চেপে তার ওপর ১ টেবিল চামচ ঝুরি করা পনির চেপে দিন। পুনরায় কিমা দিয়ে ওপরে ঝুরি করা পনির ও কুচানো ক্যাপসিকাম ছিটিয়ে প্রি-হিটেড ওভেনে ১৮০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে ১৫ থেকে ২০ মিনিট বেক করুন। বেকিং ট্রে বের করে সাবধানে তুলে সার্ভিং ডিশে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
বড়ি-করলার ভর্তাঃ
উপকরণ
বিচি ফেলে পাতলা স্লাইস করা করলা ১ কাপ, লবণ ১ চা-চামচ, কুমড়া বড়ি সিঁকি কাপ, পেঁয়াজ (মিহি স্লাইস) আধা কাপ, কাঁচা মরিচ কুচি ২টি, সরিষার তেল ২ চা-চামচ ও তেল ২ চা-চামচ।
প্রণালি
বড়ি ধুয়ে পাটায় বা হামানদিস্তায় গুঁড়া করে নিন। করলায় আধা চা-চামচ লবণ মেখে ৩০ মিনিট রেখে দিন। এবার করলা ভালো করে কচলে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। কড়াইতে তেল গরম করে মৃদু আঁচে বড়ির গুঁড়া লালচে করে ভেজে নিন। ঠান্ডা হলে এক পাশে রেখে দিন। একটি বোল বা বাটিতে পেঁয়াজ কুচি, কাঁচা মরিচ কুচি, লবণ ও সরিষার তেল মিশিয়ে ভালো করে কচলে মেখে নিন। তারপর করলা কুচি ও ভেজে রাখা বড়ির গুঁড়া দিয়ে মিশিয়ে মেখে নিন। গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।
নারিকেল-চিংড়িতে করলাঃ
উপকরণ
করলা ২ কাপ, লাল ও সবুজ ক্যাপসিকাম ১ কাপ, তেল ৩ টেবিল চামচ, গোটা জিরা ১ চা-চামচ, পেঁয়াজ স্লাইস ১ কাপ, হলুদ গুঁড়া আধা চা-চামচ, মরিচ গুঁড়া দেড় চা-চামচ, জিরা গুঁড়া ১ চা-চামচ, ধনে গুঁড়া ১ চা-চামচ, লবণ আধা চা-চামচ ও ১ চা-চামচ, চিনি ১ টেবিল চামচ, চিংড়ি মাছ ১ কাপ এবং নারিকেল বাটা ১ কাপ।
প্রণালি
করলা ও ক্যাপসিকাম ২ ইঞ্চি লম্বা করে কেটে নিন। করলায় আধা চা-চামচ লবণ মেখে ৩০ মিনিট পর পানি নিংড়ে, ভালো করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। পাত্রে তেল গরম করে জিরার ফোড়ন দিয়ে পেঁয়াজের স্লাইস সোনালি করে ভেজে চিংড়ি মাছ ও করলা দিয়ে মাঝারি আঁচে ২ থেকে ৩ মিনিট রান্না করুন। এবার নারিকেল বাটা ও হলুদ গুঁড়া দিয়ে মাঝারি আঁচে ভালো করে মিশিয়ে ঢেকে ৮ থেকে ১০ মিনিট রান্না করুন। ঢাকনা খুলে লবণ, ধনে গুঁড়া, জিরা গুঁড়া ও লাল মরিচের গুঁড়া দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে আরও কিছুক্ষণ রান্না করুন। তারপর লাল ও সবুজ ক্যাপসিকাম দিয়ে আরও ৫ মিনিট মাঝারি আঁচে রাখুন। এবার চিনি মিশিয়ে নাড়ুন। কাঁচা মরিচ দিয়ে নেড়ে আরও ২ মিনিট মৃদু আঁচে রান্না করুন।