মনোহরগন্জ কুমিল্লা প্রতিনিধি ঃ
কুমিল্লা জেলা মনোহরগন্জ উপজেলাজুড়ে কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না জমির উপরিভাগ (টপসয়েল) বিক্রির মহোৎসব। আইনের তোয়াক্কা না করে। প্রভাবশালীদের আশ্রয়ে পরিবেশ আইন অমান্য করে ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে । জমির মালিকদের থেকে কমদামে কিনে ডাবল দামে বিক্রি হচ্ছে এসব মাটি। এসব নিয়ন্ত্রণে নেই প্রশাসনের কোন সংস্থার নিয়মিত মনিটরিং। ফলে বাধাহীনভাবে বেপরোয়া চলছে মাটিকাটার কাজ। এতে কৃষি জমির উর্বরতা হারানোর পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশের ভারসাম্য। ভেঙে যাচ্ছে এলাকার রাস্তাঘাট।
মনোহরগন্জ উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) সরকারী টেনিং থাকায়, ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালনে করছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার । ফলে তার ওপর রয়েছে বাড়তি কাজের চাপ। মাটিখেকো ও লুটের চক্র প্রশাসনের এই দুর্বলতা কাজে লাগাচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, একদল অসাধু ব্যবসায়ী চক্র কৃষকদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে এসব মাটি কিনে পাচার করছে। যদিও প্রশাসন বলছে জমির উপরিভাগের মাটি কাটা অবৈধ। যারা অবৈধভাবে মাটি কাটবে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের নিয়মিত অভিযান চলমান থাকবে। দিনদুপুরে মাটি কাটা ও পরিবহন হলেও কেন কেনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না এটা প্রশ্ন রয়েছে। অতীতে কখনো পদক্ষেপ নেওয়া হলেও মূল অভিযুক্তরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। ফলে কদিন পর আগের মতোই অবস্থা চলে।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার হাসনাবাদ, বাইশগাঁও ইউনিয়নের দক্ষিণ মানরা,শাকতলা, বাইশগাঁও, রামদেবপুর, মনিপুর,শ্রীপুর, নয়নপুর,কমলপুর,ও নোয়াখালী জেলা চাটখিল থানা উত্তর /পূর্ব মোহাম্মদ পুর এলাকায় সবচেয়ে বেশি মাটি কাটা হচ্ছে। এছাড়াও মনোহরগন্জ উপজেলার খরখরিয়া, মড়হ, কাশিপুর,ও নাথের পেটুয়া এলাকায় উল্লিখিত স্থানের স্পটে অবাধে চলছে কৃষি জমি থেকে মাটি বিক্রি। প্রতিদিন বিকেল থেকে পরের দিন সকাল পর্যন্ত বিভিন্ন জমিতে লেগে আছে ট্রাক-ট্রাক্টরের দীর্ঘ লাইন। ফসলি এসব জমি থেকে এক্সেভেটরের মাধ্যমে মাটি কেটে সেগুলো পরিবহন করা হচ্ছে ট্রাক্টরের মাধ্যমে। আর এসব মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে ইটের ভাটাতে। মাটি ব্যবসায়ীরা প্রতি ট্রাক্টর মাটি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয় করে সেগুলো বিক্রি করে দিচ্ছে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকায়। আর এতে করে অধিক মুনাফা আদায় করে নিচ্ছে চক্রটি।
কৃষি অফিসের তথ্যমতে, জমির উপরিভাগের ছয় থেকে দশ ইঞ্চিতে জৈব পদার্থ বিদ্যমান থাকে। উপরিভাগ কাটার ফলে জমির ফসল উৎপাদনের ক্ষমতা হ্রাস পায়। তাই সেগুলো কাটা অথবা বিক্রি করা যাবে না। তবুও অসাধু চক্রের ফাঁদে পড়ে সামান্য কিছু টাকার জন্য জমির উপরিভাগের মাটি কাটার অনুমতি দিচ্ছেন অনভিজ্ঞ কৃষকরা। আর কিছু অসাধু মাটি খেকো মাছের ঘের করার নামে মাটি কেটে তা বিক্রি করে দিচ্ছে ব্রিকস ফিল্ডে। এ বিষয়ে সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মোঃদিদারুল আলম সরেজমিনে গিয়ে সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন আমি তাদেরকে মাটি কাটা বন্ধ করে দিয়েছি। এবং উপরে অবহিত করেছি। ভূমি কর্মকর্তা চলে যাওয়ার পিছনেই আবার মাটি কাটা আরম্ভ হয়।
পরিবেশ সংরণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১২ এর ৬ ধারায়) অনুযায়ী, প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট টিলা ও পাহাড় নিধন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অন্যদিকে ১৯৮৯ সালের ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন (সংশোধিত ২০১৩) অনুযায়ী, কৃষি জমির টপ সয়েল বা উপরিভাগের মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করাও সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ রয়েছে।দুই আইনে শাস্তির বিধান একই রকম। এসব কাজে জড়িত ব্যক্তিদের দুই লাখ টাকার জরিমানা ও দুই বছরের কারাদন্ড দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। একই কাজ দ্বিতীয়বার করলে দায়ী ব্যক্তির ১০ লাখ টাকা জরিমানা ও ১০ বছরের কারাদন্ড হবে। এ ক্ষেত্রে এ কাজের সঙ্গে জড়িত জমি ও ইটভাটার মালিক উভয়ের জন্যই সমান শাস্তির বিধান রাখা হয়।
এমতাবস্থায় পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখতে এবং এলাকার রাস্তাঘাট রক্ষায় প্রশাসনের আরও কঠোর নজরদারি কামনা করে গনসাক্ষর সহ দরখাস্ত পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে জমা দেয় স্থানীয় এলাকাবাসী।
এ বিষয়ে কুমিল্লা পরিবেশ অধিদপ্তররে উপপরিচালক মোসাব্বের হোসেন মোহাম্মদ রাজিব এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন আমরা এ বিষয়ে আইনি ব্যাবস্হা নিচ্ছি। কিন্তু ৫মাস পেরিয়ে গেলেও কোন পদক্ষেপ নেয়নি। উপজেলা নিবার্হী অফিসার গাজালা পারভিন রুহি সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন।সামনে নির্বাচন আমরা সে লক্ষে কাজ করছি।আর আমার একার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। এবং এ কাজ পরিবেশ অধিদপ্তরের।