মনোহরগঞ্জ (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার হাসনাবাদ ইউনিয়নের শ্রীপুর এলাকায় অবস্থিত ‘মিঝি ব্রিকস’ নামের ইটভাটা দীর্ঘদিন ধরে সরকারি ছাড়পত্র ছাড়াই অবাধে পরিচালিত হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন একাধিকবার অভিযান চালিয়ে চুল্লি ভেঙে দিয়ে লাল সাইনবোর্ড টানিয়ে বন্ধ ঘোষণা করলেও অবৈধ ইটভাটা গুঁড়িয়ে দিতে পদক্ষেপ নিচ্ছেনা কুমিল্লা পরিবেশ অধিদপ্তর। এই সুযোগে স্থানীয় প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ভাটার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে মালিক পক্ষ।
স্থানীয়দের অভিযোগ , প্রশাসনিক তৎপরতা কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ। কুমিল্লা পরিবেশ অধিদপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে অভিযান শেষ করে যাওয়ার পরপরই আবারও আগুন জ্বালিয়ে ভাটা চালু করা হতো। একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ ও জরিমানা আদায় সত্ত্বেও ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ হয়নি।
এবার ভাটা চালুর আগে ভাটা বন্ধের জন্য ঢাকা অফিস থেকে চিঠি দিলেও আমলে নেয়নি কুমিল্লা পরিবেশ অধিদপ্তরে কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে কাঠ পুড়িয়ে ইট পোড়ানো শুরু করে দিয়েছে ভাটার কথিত মালিকরা। নির্বিগ্নে ইট পোড়ানোর জন্য সরকারি বিভিন্ন দপ্তর এবং স্থানীয় প্রভাবশালীদের আনুকূল্য পেতে দৌড়ঝাঁপ করছে অবৈধ ইটভাটা কথিত মালিক পক্ষ।
জানা যায় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর পক্ষে নাসির উদ্দীন নামে একজন ইটভাটাটি বন্ধের জন্য বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা, পরিবেশ সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর গণস্বাক্ষরসহ লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। সে প্রক্ষিতে গত ২৬ মে ভাটাটি বন্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের হেড অফিস থেকে উপ মহাপরিচালক সোহরাব আলী, কুমিল্লা পরিবেশ অধিদপ্তরকে চিঠি দিলেও অজ্ঞাত কারণে এখনও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি পরিবেশ অধিদপ্তর কুমিল্লা।
এনিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ মহাপরিচালক সোহরাব আলী বলেন ভাটা বন্ধের জন্য আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কুমিল্লা অফিসকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
এনিয়ে কুমিল্লা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোসাব্বের হোসেন রাজিবের সাথে কথা বললে তিনি চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন স্থানীয় প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা করলে আমরা শিগগিরই অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালাবো।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ‘মিঝি ব্রিকস’-এর চারপাশে রয়েছে ঘনবসতি, একটি মসজিদ, দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মাদরাসা। নাথেরপেটুয়া-হাসনাবাদ প্রধান সড়কের পাশে অবস্থিত হওয়ায় প্রতিদিন শত শত শিক্ষার্থী ও পথচারী কালো ধোঁয়া ও ধুলাবালির কবলে পড়ছেন। শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ ও অন্যান্য স্বাস্থ্য জটিলতা বাড়ছে উদ্বেগজনকভাবে।
অভিযোগ রয়েছে, কৃষিজমি থেকে নির্বিচারে মাটি কেটে নেওয়ায় ফসলি জমি ধ্বংসের মুখে পড়েছে। ফসলের উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, বর্ষায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে ঘরবাড়ি ও কৃষি উৎপাদনে মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।
স্থানীয় এক ক্ষুব্ধ বাসিন্দা বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের কারণেই এখানে আইন-আদালত, প্রশাসন — কারও নির্দেশই এখানে কার্যকর হয় না। দিনে অভিযান হয়, রাতে আগুন জ্বলে ওঠে। আমাদের শিশুদের ভবিষ্যৎ আজ ধোঁয়ার কুণ্ডলীতে বন্দি।
পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ হুমকি হয়ে ওঠা এ অবৈধ ইটভাটা দ্রুত বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।