সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা সীমান্তে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চোরাকারবারীরা। ভারত থেকে অবৈধ ভাবে পাথর ও কয়লা পাচাঁর করতে গিয়ে খাসিয়াদের হাতে বাংলাদেশী ১ শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ওই শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এছাড়াও মদ ও অবৈধ কয়লা বোঝাই ১টি ইঞ্জিনের নৌকাসহ ২ চোরাকারবারীকে গ্রেফতার করেছে বিজিবি ও পুলিশ।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- গতকাল বৃস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) রাত ২টা থেকে আজ শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) সকাল ৮টা পর্যন্ত প্রায় ৬ঘন্টায় টেকেরঘাট সীমান্তের লাকমা, পুলিশ ফাঁড়ি ও হাইস্কুলের পিছন দিয়েসহ এই সীমান্তের নীলাদ্রী লেকপাড় ও বুরুঙ্গাছড়া এলাকা দিয়ে পৃথক ভাবে প্রায় ৫শ মেঃটন কয়লা ও ২শত মেঃটন চুনাপাথর পাথর করেছে চোরাকারবারী আক্কল আলী, রুবেল মিয়া, তাজুল ইসলাম, মহিবুর মিয়া, আমীর আলী, সাইদুল মিয়া, মোহাম্মদ আলীগং। অন্যদিকে একই সময়ে পাশের চাঁনপুর সীমান্তের রাজাই, নয়াছড়া ও রজনীলাইন এলাকা দিয়ে চোরাকারবারী কালাম মিয়া, জহির মিয়া, হারুন মিয়া, রুসমত আলী, নজরুল মিয়া, লাল মিয়া, সাদ্দাম মিয়া, আকরাম, জানু মিয়া ও সাগর মিয়াগং প্রায় ৩শ মেঃটন কয়লা, সুপারী ও মদসহ কসমেটিকস পাচাঁর করে টেকেরঘাট সীমান্তের জয়বাংলা বাজারের বিভিন্ন দোকানপাটসহ ওই বাজার সংলগ্ন বাঁশের ব্রিজের পাশে অবস্থিত মিলন মিয়া, তোতা মিয়া, শাহ পরান, ওসমান মিয়া ও হাকিম মিয়ার জায়গায় পাচাঁরকৃত কয়লা ও চুনাপাথর ওপেন মজুত করা হয়। কিন্তু এসব অবৈধ মালামাল আটকের জন্য বিজিবি পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়না। অথচ টেকেরঘাট বিজিবি ক্যাম্পে ভিআইপি মশিউর রহমান কর্মরত থাকাকালীন সময় বন্ধ ছিল সকল চোরাচালান। সম্প্রতি ভিআইপি মশিউর অন্যত্র বদলি হয়ে যাওয়ার পর থেকেই বেড়ে যায় চোরাচালান বাণিজ্য।
অন্যদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) রাত ৮টায় পাশের চারাগাঁও সীমান্তের লালঘাট এলাকায় বিজিবি অভিযান চালিয়ে ৬০হাজার টাকা মূল্যের ৪০ বোতল ভারতীয় মদ জব্দ করেছে। এদিকে পাশের বালিয়াঘাট সীমান্তের লালঘাট ও লাকমা সীমান্ত দিয়ে চোরাকারবারী হাসিম মিয়া, জানু মিয়া, জিয়াউর রহমান জিয়া, মনির মিয়া, কামরুল মিয়া, রতন মহলদার ,শরীফ মিয়া, তিতু মিয়া ও ইয়াবা কালামগং প্রায় ৫শ মেঃটন কয়লা ও মাদকদ্রব্য পাচাঁর করে। পরে পাচাঁরকৃত মালামাল ইঞ্জিনের নৌকা বোঝাই করে নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা নিয়ে যাওয়ার সময় মধ্যনগর থানার পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৩১ মেঃটন অবৈধ কয়লা বোঝাই নৌকাসহ চোরাকারবারী সালমান মিয়া (২২) ও জামিরুল ইসলাম (২৬) কে গ্রেফতার করে।
এদিকে গত বুধবার (২৩ অক্টোবর) রাত ২টায় লাউড়গড় সীমান্তের যাদুকাটা নদীর বারেকটিলা সংলগ্ন কৃষ্ণবাগানের কাছ দিয়ে সোর্স পরিচয়ধারী ইব্রহিম মিয়া প্রতি বারকি নৌকা থেকে ৫শ কাটা করে চাঁদা নিয়ে প্রায় শতাধিক লোকজনকে ভারতের ভিতরে পাঠায় কয়লা ও পাথর আনার জন্য। এখবর পেয়ে ভারতীয় খাসিয়ারা অস্ত্র-সস্ত্র ও লাটিসুটা নিয়ে বারকি শ্রমিকদের তাড়া করে। ওই সময় বেশি ভাগ শ্রমিকরা সাতার কেটে ও যে যার মতো করে পালিয়ে আসতে সক্ষম হলেও শেখ ফরিদ (৩৫) নামের এক শ্রমিককে খাসিয়ারা আটক করে ফেলে। পরে তারা শ্রমিক ফরিদকে কুপিয়ে হত্যা করে ভারতের ভিতরে নদীর তীরে ফেলে রাখে। কিন্তু গত ২দিনেও সেই শ্রমিকের লাশ ফেরত আনা সম্ভব হয়নি বলে জানা গেছে।
এব্যাপারে টেকেরঘাট কোম্পানী কমান্ডার আতিয়ার রহমান বলেন- কয়লা ও চুনাপাথর পাচাঁরের খবর পেলে ঘটনাস্থলে সৈনিক পাঠানো হয়। সীমান্ত সংলগ্ন ও তার আশেপাশে যে অবৈধ কয়লা ও চুনাপাথর মজুত আছে তার বিষয়ে আমার কিছুই বলার নাই। মধ্যনগর থানার ওসি সজীব রহমান জানান- তাহিরপুর সীমান্ত থেকে আসা অবৈধ কয়লা বোঝাই নৌকাসহ আটককৃত ২ চোরাকারবারীর বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করে আদালতের মাধ্যমে কারাঘারে পাঠানো রয়েছে।