নারীদের ওপর জোর করে কোনো কিছু চাপিয়ে দেয়া হবে না ডা. শফিকুর রহমান

নিউজ ডেস্ক | 71shadhinota.com
আপডেট : ১৯ অক্টোবর, ২০২৪

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, “আওয়ামী লীগের জুলুমের শিকার দেশের ১৮ কোটি মানুষ। তাদের জুলুমের শিকার হতে হয়েছে নিজ দলের অনেক নেতাকর্মীকেও। তারা গত সাড়ে ১৫ বছর যে যেভাবে পেরেছে লুটপাট, দখল, অর্থ পাচার আর সন্ত্রাসী করেছে। ভাগ-বাটোয়ারার বিরোধে নিজেরাই নিজেদের নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে। ক্ষমতা ধরে রাখতে গণহত্যা চালিয়েছে। তাদের গণহত্যা থেকে মায়ের কোলের দেড় মাসের শিশুও রক্ষা পায়নি। শিশু-কিশোর, নারী-পুরুষ সাধারণ জনগণকে আওয়ামী লীগ হত্যা করেছে। তাদের জুলুমের প্রতিবাদে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা শুধু পদত্যাগই করেনি দলবলসহ দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। ১৯ অক্টোবর শনিবার সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা জামায়াতের রুকন সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র ও নির্বাচনে বিশ্বাসী নয়। তারা ২০০৮ সালে প্রশ্নবিদ্ধ নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতা দখল করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্তি করে নিজেদের অধীনে নিজেরাই ৩টি নির্বাচন করেছে। ২০১৪ সালে একতরফা নির্বাচন, ২০১৮ সালে ভোর রাতের ভোট, ২০২৪ সালে ডামি ভোট দিয়ে জনগণের সাথে তামাশা করেছে। দেশের কয়েক লক্ষ কোটি টাকা অপচয় করেছে। তারা যদি গণতন্ত্র ও নির্বাচনে বিশ্বাসী হতো তাহলে তামাশার নির্বাচন করতো না। যারা আজ আওয়ামী লীগকে ভোটে আসার কথা বলে, আমি বলবো ভোটে আসতে হলে আগে আওয়ামী লীগকে মানুষ হতে হবে। তারপর দেশের জনগণ ঠিক করবে আওয়ামী লীগ নির্বাচন করতে পারবে কিনা। 

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশ থেকে ইসলামকে চিরতরে বিদায় করতে গিয়ে তারা নিজেরাই আজ বিতাড়িত হয়েছে। আওয়ামী লীগ আলেম-ওলামাদেরকে তাদের প্রধান শত্রু মনে করেছে। কারণ আলেম-ওলামাগণ ঐক্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তারা ইসলাম ও ইসলামী রাষ্ট্রের বিরোধিতা করে নানা রকম অপপ্রচার চালিয়েছে। তারা নারীদেরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রচার করতো জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে নারীর স্বাধীনতা থাকবে না। অথচ মহানবী (সা.) নারীদেরকে যুদ্ধের ময়দানে নিয়েছেন, নারীরা ব্যবসা করেছেন, নারীরা দ্বীন প্রচার করেছেন। তাহলে বাংলাদেশে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে নারীরা কেন ঘরে বন্দী থাকবে প্রশ্ন রেখে আমীরে জামায়াত বলেন, আগামীর বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে নারী-পুরুষ সমানভাবে নতুন বাংলাদেশ গঠনে ভূমিকা রাখবে। নারীদের ওপর জোর করে কোনো কিছু চাপিয়ে দেয়া হবে না। 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আওয়ামী লীগের লক্ষ্য ছিল আলেমদের হত্যা করে বাংলাদেশ থেকে ইসলামকে চিরতরে নির্মূল করা। এরই অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে মানুষ হত্যা, ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামীর আলেমদের হত্যা, জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা সহ অসংখ্য আলেম-ওলামা ও সাধারণ জনগণকে হত্যা করেছে। আওয়ামী লীগ তাদের ক্ষমতার ১৫ বছরে ১৪টি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছে। এসব ব্যাংক জনগণের কল্যাণে প্রতিষ্ঠা না করে, এসব ব্যাংকের মাধ্যমে জনগণের টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করেছে। জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠা করা ইসলামী ব্যাংক দেশের অর্থনীতিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। সেই ইসলামী ব্যাংকে আওয়ামী লীগ থাবা দিয়েছে। ইসলামী ব্যাংকের অর্থনৈতিকভাবে কোমর ভেঙে দিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী সুযোগ পেলে পুনরায় ইসলামী ব্যাংককে অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ করে গণমানুষের ব্যাংক হিসেবে গড়ে তুলবে। নতুন বাংলাদেশ গঠনে সৎ নিষ্ঠাবান নেতৃত্বের কোন বিকল্প নেই। আর সেই সৎ নিষ্ঠাবান নেতৃত্ব রয়েছে জামায়াতে ইসলামীতে। বৈষম্যহীন মানবিক বাংলাদেশ গড়তে তিনি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে নেতাকর্মীদের ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।

নূরুল ইসলাম বুলবুল চাঁপাইনবাবগঞ্জ বাসীর উদ্দেশ্য বলেন, অতিতে যারা চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনের জনগণের ভোট চুরি করেছে, তারা জনগণের টাকা চুরি করে বিদেশে পাচার করেছে। আগামীতে যদি চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) সংসদীয় এলাকার মানুষ আমার কাঁধে এই অঞ্চলের মানুষের দায়িত্ব দেয়, তবে জনগণের ভাগ্য নিয়ে আর কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আসন বাংলাদেশের একটি আধুনিক এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এই সমাজে কোন বৈষম্য থাকবে না। প্রতিটি নাগরিক রাষ্ট্রের কাছে প্রাপ্য অধিকার ভোগ করবে। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ বাসীকে বিশেষ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান। 

চাঁপাইনবয়াবগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা আবুজার গিফারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত রুকন সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও রাজশাহী অঞ্চলের জোন পরিচালক অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও রাজশাহী অঞ্চলের সহকারী জোন পরিচালক অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সাবেক আমীর ও সাবেক পৌর মেয়র অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, সাবেক এমপি অধ্যাপক লতিফুর রহমান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মশিউর রহমান, জেলা সেক্রেটারী অধ্যাপক আবু বকর প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।”