রাজশাহীর পদ্মা পাড়ে মাছের বাজার, জেলে ও ক্রেতাদের মিলনমেলা

নিউজ ডেস্ক | 71shadhinota.com
আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
রাজশাহীর পদ্মা পাড়ে মাছের বাজার, জেলে ও ক্রেতাদের মিলনমেলা

আবু হেনা মোস্তফা জামান, রাজশাহী: রাজশাহী নগরীর
শ্রীরামপুরে পদ্মা নদীর পাড়ে প্রতিদিন ভোর ৫টা থেকে ৮টা
পর্যন্ত বসে এক অনন্য মাছের বাজার। টি-বাঁধে এই বাজারটি
শুধু জেলেদের জীবিকার উৎস নয়, বরং টাটকা মাছের সন্ধানে আসা
ক্রেতাদের কাছে এক নির্ভরযোগ্য স্থান। ভোরের আলো, পদ্মার নির্মল
বাতাস আর মাছের গন্ধে তিন ঘণ্টার এই বাজার পরিণত হয় এক
উৎসবমুখর পরিবেশে।
বৃহস্পতিবার ভোরে সরেজমিনে দেখা যায়, রাতভর পদ্মায় মাছ ধরে
জেলেরা তাদের হাড়িভর্তি মাছ নিয়ে ঘাটে ভিড় করছেন। বাজারে
একদিকে সাজানো হরেক প্রজাতির মাছ, অন্যদিকে চলছে
ক্রেতাদের দর কষাকষি। পদ্মা নদীর মনরম প্রাকৃতিক পরিবেশে টাটকা
মাছ কেনার এক ভিন্ন আমেজ উপভোগ করেন ক্রেতারা।
এই বাজারে মূলত পদ্মার তাজা মাছ পাওয়া যায়। বাঘাইড়, গুচি,
গজার, শোল, পাবদা, চিতল, রিটা, মলা, ট্যাংড়া, পিয়ালি, বাছা,
পাতাশি, বেলে, পুটি এবং ছোট চিংড়িসহ নানা প্রজাতির
মাছ এখানে সহজলভ্য। জেলেরা জানিয়েছেন, মাঝে মাঝে ইলিশও ধরা
পড়ে। মাছের আকার ও মানভেদে প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ১০০০
টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।
এই বাজারের একটি বিশেষ সুবিধা হলো, মাত্র ১০০ টাকার
বিনিময়ে ক্রেতারা তাদের কেনা মাছ কেটে, ধুয়ে পরিষ্কার করিয়ে
নিতে পারেন। রিমা ও পলি নামের দুই নারী এই কাজ করে জীবিকা
নির্বাহ করেন। তারা বলেন, প্রতিদিনই মাছ কিনতে খুচরা
ক্রেতারা আসেন। অনেকেই দূরদূরান্ত থেকে পদ্মার তাজা মাছ
কিনতে আসেন। আমরা মাছ কেটে দিয়ে তাদের সুবিধা দিচ্ছি।
রাজশাহী নগরীর হাদির মোড় এলাকার মিজানুর রহমান টনি দম্পতি
নিয়মিত এই বাজার থেকে মাছ কেনেন। তিনি বলেন, আজ তিন
কেজি মাছ কিনেছি। পদ্মার টাটকা মাছের স্বাদই আলাদা, এতে
কোনো ফরমালিন নেই। দামও বাজারের চেয়ে কম। এখানে মাছ
কেটে ধুয়ে পরিষ্কার করার সুযোগ থাকায় বাড়িতে আর মাছ
কাটার ঝামেলা থাকে না।
পুলিশের এসআই তাজউদ্দীনও পরিবার নিয়ে মাছ কিনতে
এসেছিলেন। তিনি বলেন, ব্যস্ততার কারণে বাজারে যেতে পারি না।

তাই একসঙ্গে তিন কেজি মাছ কিনলাম। দামও বেশ সাশ্রয়ী।
ছোট মাছ কাটাতে ঝামেলা মনে হয়, তাই মাছ কেটে পরিষ্কার
করে নিলাম। এক সপ্তাহের জন্য ফ্রিজে রেখে খাব।
রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী সাহেব আলী বন্ধুদের সঙ্গে
এসেছিলেন ভোরের সৌন্দর্য ও মাছ কেনার আনন্দ উপভোগ করতে।
তিনি বলেন, ভোরে নদীর পাড়ে এসে মাছ কেনার আনন্দই আলাদা।
দরদাম করে মাছ কিনলাম, আর পদ্মার শীতল হাওয়া উপভোগ করলাম।
প্রতিদিন অর্ধ শতাধিক জেলে এই বাজারে মাছ বিক্রি করেন।
তাদের মতে, প্রতিদিন গড়ে লাখ টাকার বেশি লেনদেন হয়। এই
বাজার তাদের জীবিকার অন্যতম প্রধান উৎস।
জেলে জামিল হোসেন জানান, পদ্মার পানি বাড়লে মাছ কম ধরা
পড়ে, আর পানি কমলে বেশি মাছ পাওয়া যায়। শীতকালে ইলিশ বেশি
মেলে। গত সপ্তাহে দুটি জাটকা ইলিশ ধরা পড়েছিল।
জেলে রহমান বলেন, আজ তিনটি গজার মাছ পেয়েছিলাম। ছয়শ
টাকা কেজি দরে সাড়ে চার কেজি মাছ ২ হাজার ৭০০ টাকায়
বিক্রি করেছি। গতকাল তিন হাজার টাকার মাছ বিক্রি করেছিলাম।
অন্য এক জেলে শান্ত জানান, পদ্মায় এখন পানি বেড়েছে তাই মাছ
একটু কম পাওয়া যাচ্ছে। চিংড়ি, পিয়ালি, গুচি, টেংড়া ও
পুঁটিমাছ মিলে ৬ কেজি মাছ পেয়েছিলাম। সাড়ে আটশ টাকা
কেজি দরে বিক্রি করেছি।
রবিউল ইসলাম নামে এক জেলে বলেন, পদ্মায় মাছ ধরা শুরু হয় রাত
থেকেই। আবহাওয়া ভালো থাকলে সন্ধ্যার পর প্রস্তুতি নেই। রাত
১০টার দিকে নৌকা নিয়ে নদীতে যাই, সারারাত মাছ ধরি। ভোরে
বাজারে এনে বিক্রি করি। আড়ত বাদ দিয়ে সরাসরি ক্রেতার কাছে
বিক্রি করায় লাভ বেশি হয়। খাজনাও নেই, তাই খরচ কম।
প্রতিদিন ভোরে পদ্মার পাড়ের এই মাছের বাজার এখন রাজশাহীর
মানুষের কাছে দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। শুধু মাছ কেনা নয়,
অনেকে ভোরের সৌন্দর্য উপভোগ করতেও আসেন। ভোরের নরম রোদ,
পদ্মার সতেজ হাওয়া আর মাছের গন্ধ মিলে তৈরি হয় এক অন্যরকম
পরিবেশ।