স্বৈরাচারের রাজনীতিতে বিএনপি বিশ্বাস করে না, রাজশাহীতে মঈন খান

নিউজ ডেস্ক | 71shadhinota.com
আপডেট : ১২ জুলাই, ২০২৫
স্বৈরাচারের রাজনীতিতে বিএনপি বিশ্বাস করে না, রাজশাহীতে মঈন খান


মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী: বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন- আমরা অনেক রাজনীতিক দল বাংলাদেশে দেখেছি। আওয়ামী লীগ হচ্ছে পথভ্রষ্ট রাজনীতিক দল।  আওয়ামী লীগের যে পরিণতি হয়েছে, তাদের দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে।
শনিবার (১২ জুলাই) দুপুর ১২ টায় রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী ভুবন মোহন পার্কে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচি উপলক্ষে ফরম বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, এই সরকারে যারা এসেছে, জনগণ যাদের এই গুরুদায়িত্ব দিয়েছে এদেশে একটি সুষ্ঠ ও নিরোপেক্ষ নির্বাচন করে সারা বাংলাদেশকে পূর্ণরায় গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে আনা। আমরা জানি এখানে সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। আমরা জানি দেশে ন্যায় বিচারের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই- সংস্কার এবং বিচার দুটায় কিন্তু একটি চলমান প্রক্রীয়া। এটা এই রকম নয়, আমরা আজকে সংস্কার করে দিলাম, সব সংস্কার শেষ হয়ে গেল। আমরা সুবিচার করে দিলাম, সব সুবিচার আজকে শেষ হয়ে গেল। সংস্কার ও বিচার প্রক্রীয় এরকম নয়।
বিএনপি নেতা মঈন খান বলেন, বিগত স্বৈরাচারী সরকার বলত আগে উন্নয়ন, পরে গণতন্ত্র। মনে আছে আপনারাদের? এটা ছিল ভুয়া কথা। আজকে কারও মুখে আমরা এটা শুনতে চাই না- আগে সংস্কার হবে, আগে বিচার হবে, পরে গণতন্ত্র হবে, পরে নির্বাচন হবে। এই কথা আমরা অন্তবর্তীকালীন সরকারের মুখে শুনতে চাই না।
তিনি বলেন, এখন সময় হচ্ছে- আমরা সৃঙ্খলভাবে একটি পরিবেশ পরিস্থিতি বাংলাদেশে সৃষ্টি করব। যেখানে সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। আমরা ১৬ বছর ধৈর্য রেখেছি। আমরা আগামি কয়েক মাস ধৈর্য রাখব। আমরা নিয়মের বাইরে যাব না। আমরা শৃঙ্খলার বাইরে যাব না। আমরা কারও উপরে জোর করে কোন কিছু চাপিয়ে দেব না। কেনো না সেটা গণতন্ত্র নয়, সেটা স্বৈরাচার। স্বৈরাচারের রাজনীতিতে বিএনপি বিশ্বাস করে না। বিএনপি বিশ্বাস করে আইনের শাসনে। আমরা জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করি। আমরা মাসুষের ভোটে বিশ্বাস করি। আমরা মানুষের গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। যে যতই স্বড়যন্ত্র করুক, বাংলাদেশের মানুষের উপরে আমাদের আস্থা আছে। আগামি নির্বাচনে জনগণ তাদের প্রতিনিধিত্ব করার আমাদের সুযোগ দেবে।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি একটি ভিন্নধর্মী রাজনীতিক দল। আমরা অনেক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশে দেখেছি। পথভ্রষ্ট রাজনৈতিক দল দেখেছি। আওয়ামী লীগ হচ্ছে পথভ্রষ্ট রাজনীতিক দল। এই যে আওয়ামী লীগের যে পরিণতি হয়েছে, দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে। আজকে দীর্ঘ ১১ মাস অতিবাহিত হয়েছে। এই ১১ মাসের মধ্যে একজন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী কাউকে দেখাতে পারবেন যে সৎসাহস নিয়ে বলতে পেড়েছে- যে আমরা বাংলাদেশের মানুষের প্রতি অন্যায় করেছি। আমরা ক্ষমা চাই। কেউ বলে নাই।
তিনি বলেন, আজকে সেই রাজনৈতিক দলকে বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যাক্ষাণ করেছে। আপনাদের সতর্ক থাকতে হবে, আপনাদের খেয়াল রাখতে হবে। বিএনপি যেনো কোন দিন আওয়ামী লীগের মত এই ধরনের আচারণ না করে। আমরা মানুষের সেবা করার জন্য রাজনীতিতে এসেছি। আমরা রাজনীতিকে আওয়ামী লীগের মত ব্যবসা হিসেবে নেয় নাই। আমরা মানুষের সেবা করব। আমরা সেই সেবার উদ্দেশ্যে নিয়ে রাজনীতিতে এসেছি। আপনারা মানুষের সেবা করবেন। মানুষে আপনাদের প্রতিদান দেবে।
অনুষ্ঠানে রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এ্যাড. এরশাদ আলীর (ঈশা) সভাপতিত্বে বক্তা ছিলেন- রাজশাহী বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত। বিশেষ অতিথি ছিলেন, রাজশাহী মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল হুদা। রাজশাহী মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মামুন-অর-রশিদের সঞ্চালনায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।#
 নাবালক প্রেম ও পারিবারিক বিচ্যুতি: সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক ও নৈতিক পর্যালোচনা
মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী: বর্তমান বাংলাদেশসহ উপমহাদেশীয় সমাজে একটি নীরব বিপর্যয় দেখা দিচ্ছেদ স্কুলপড়ুয়া কিশোর-কিশোরীদের আগাম প্রেম, পালিয়ে যাওয়া এবং বিয়ে। অনেকেই এটিকে শুধু ‘নৈতিক অবক্ষয়’ বলেই দায়সারা করতে চান, কিন্তু বিষয়টি এর চেয়ে কয়েকগুণ জটিল ও গভীর। এটি কেবল পারিবারিক শিক্ষার ঘাটতি নয় বরং সমাজের মানসিক কাঠামো, প্রযুক্তির আগ্রাসন এবং মূল্যবোধের পরিবর্তনের প্রতিফলন।
মনোবিজ্ঞানী এরিক এরিকসন বলেন-
অফড়ষবংপবহপব রং ঃযব ধমব ড়ভ রফবহঃরঃু াং. ৎড়ষব পড়হভঁংরড়হ. অর্থাৎ, এই বয়সে একটি কিশোর বা কিশোরী নিজের পরিচয় ও অস্তিত্ব নিয়ে এক ধরনের দোলাচলে থাকে। সে জানতে চায় আমি কে? কী চাই? কে আমাকে ভালোবাসে? এই সন্ধিক্ষণে যদি সে সঠিক দিকনির্দেশনা না পায়, তবে ভালোবাসা, স্বীকৃতি বা সাহচর্য খোঁজে ভুল জায়গায়। তখনই সে ভুল সিদ্ধান্তে পৌঁছায় যেমন, প্রেমে জড়িয়ে পালিয়ে যাওয়া।
নিউরোসায়েন্স বলছে, এই বয়সে মানুষের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স (ফবপরংরড়হ সধশরহম নৎধরহ ুড়হব) পুরোপুরি গঠিত হয় না, ফলে তারা ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঝোঁক রাখে। যেমন একটি অল্প বয়সী মেয়ে যখন ভাবে, আমার পরিবারের চেয়ে সে-ই আমাকে বেশি বোঝে, তখন তা বাস্তব নয়, বরং একধরনের মানসিক বিভ্রম।
আবার বিশ্বখ্যাত সমাজতাত্ত্বিক জিগমুন্ট বাউম্যান তার “খরয়ঁরফ খড়াব” গ্রন্থে বলেন, “ওহ ঃযব ধমব ড়ভ ষরয়ঁরফ সড়ফবৎহরঃু, ৎবষধঃরড়হংযরঢ়ং ধৎব ংযড়ৎঃ-ষরাবফ, রসঢ়ঁষংরাব ধহফ ড়ভঃবহ রসসধঃঁৎব.” এই ষরয়ঁরফ সড়ফবৎহরঃু অর্থাৎ তরল আধুনিকতার যুগে প্রেম আর আবেগে ধৈর্য নেই, বন্ধন নেই, স্থায়িত্ব নেই। মোবাইল ফোনের একটি বার্তা, ফেসবুকের একটি ইনবক্স বা ইউটিউবের একটি রোমান্টিক শর্টফিল্মই হয়ে উঠছে সিদ্ধান্তের ভিত্তি। এমনকি বয়ঃসন্ধিকালের মানসিক দুর্বলতার সঙ্গে প্রযুক্তির এই মোহজাল মিলে গিয়ে কিশোর-কিশোরীদের বাস্তববিচ্ছিন্ন করে তোলে।
দার্শনিক সোয়ামি বিবেকানন্দ বলেছিলেন- “ঊফঁপধঃরড়হ রং ঃযব সধহরভবংঃধঃরড়হ ড়ভ ঃযব ঢ়বৎভবপঃরড়হ ধষৎবধফু রহ সধহ.” কিন্তু আমাদের দেশে সেই শিক্ষার ভিতেই যদি পারিবারিক মূল্যবোধ, আত্মসংযম ও জীবনের মূল উদ্দেশ্য শেখানো না হয়, তবে তা কেবল সার্টিফিকেট অর্জনের পথেই সীমাবদ্ধ থাকে।
যেখানে মা-বাবা সারাদিন কর্মব্যস্ত, সন্তানরা বড় হচ্ছে টিকটক ও রিল ভিডিও দেখে সেখানে আবেগের বিকাশ ঘটছে বাণিজ্যিক ভালবাসার গানে আর কৃত্রিম রোমান্টিক গল্পে।
বর্তমানে জনপ্রিয় ধারাবাহিক নাটক, মিউজিক ভিডিও, সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার সব জায়গাতেই প্রেমের একটি গ্ল্যামারাইজড, অবাস্তব রূপ প্রচারিত হচ্ছে। তরুণরা দেখে প্রেম মানেই ‘অ্যাডভেঞ্চার’, ‘নির্বিচারে স্বাধীনতা’ অথবা ‘পালিয়ে গিয়ে বিয়ে’। অথচ বাস্তবতা তার বিপরীত।
মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন:
“ জবধষ ষড়াব রং হড়ঃ লঁংঃ ধ ভষববঃরহম বসড়ঃরড়হ; রঃ রং ৎবংঢ়ড়হংরনরষরঃু, ংধপৎরভরপব ধহফ পড়সসরঃসবহঃ. ”
এই শিক্ষাটা কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে।
অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা অনুযায়ী, যৌনতা, সম্পর্ক ও আবেগগত শিক্ষা (ঈড়সঢ়ৎবযবহংরাব ঝবীঁধষরঃু ঊফঁপধঃরড়হ) কিশোর-কিশোরীদের আত্মসচেতন করে তোলে, তারা ভুল সিদ্ধান্তে কম যায়। কিন্তু বাংলাদেশে যৌনতা ও সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা আজও ‘ট্যাবু’। ক্লাসে জীববিজ্ঞানে মানব প্রজনন অধ্যায় এলে শিক্ষকেরাও মুখ ঘুরিয়ে নেন। ফলে শিক্ষার্থীরা তথ্য খুঁজে নেয় গুগল বা ইউটিউব থেকে যা অনেক সময় বিভ্রান্তিকর ও ক্ষতিকর হয়।
বিখ্যাত মনীষীদের আরও দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে এ সম্পর্কে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘ছুটি' গল্পে দেখিয়েছেন একটি শিশুর মনোভাব বোঝা কতটা জরুরি, তা না বুঝলে সে কতখানি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
অল্ডাস হাক্সলি বলেন- “ ঊীঢ়বৎরবহপব রং হড়ঃ যিধঃ যধঢ়ঢ়বহং ঃড় ধ সধহ. ওঃ রং যিধঃ ধ সধহ ফড়বং রিঃয যিধঃ যধঢ়ঢ়বহং ঃড় যরস.” অর্থাৎ কিশোরদের প্রেম-আবেগ একদম অপ্রাকৃতিক নয়, কিন্তু সেই আবেগকে কীভাবে তারা মোকাবিলা করে, সেটাই আসল শিক্ষা।
নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছিলেন:
“ঊফঁপধঃরড়হ রং ঃযব সড়ংঃ ঢ়ড়বিৎভঁষ বিধঢ়ড়হ যিরপয ুড়ঁ পধহ ঁংব ঃড় পযধহমব ঃযব ড়িৎষফ” কিন্তু সেই শিক্ষার অভ্যন্তরীণ কাঠামো যদি মূল্যবোধহীন হয়, তাহলে পরিবর্তন নয় বিপর্যয় আসবে।
এখন এই মহামারির সমাধান ও করণীয় হতে পারে-
পরিবারে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ গড়ে তোলা, সন্তানের সঙ্গে নিয়মিত খোলামেলা আলোচনা, তাদের অনুভূতির মর্যাদা দেওয়া, বিদ্যালয়ে কাউন্সেলিং ও জীবন দক্ষতা শিক্ষা চালু করা, যৌনতা সম্পর্ক ও দায়িত্ব নিয়ে শিক্ষার ক্ষেত্র সম্প্রসারিত করা, সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ ও সচেতনতা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কিশোর উপযোগী কনটেন্ট প্রচার ও ক্ষতিকর কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণ করা, সংবাদমাধ্যম ও সংস্কৃতিজগতের ইতিবাচক ভূমিকা
নাটক, সিনেমা ও গানে নাবালক প্রেমের রোমান্টিকীকরণ কমিয়ে বাস্তবচিত্র তুলে ধরা।
১৪-১৫ বছরের কিশোর বয়স মানেই প্রেম নয়, কিন্তু সেই বয়সে প্রেম, আবেগ ও সম্পর্ক এক বাস্তব অনুভব যা সমাজ, পরিবার ও শিক্ষার মাধ্যমে সঠিক পথে পরিচালনা করা জরুরি। নতুবা তারা পালিয়ে গিয়ে শুধু নিজেকে নয়, পুরো সমাজকেই একটা অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দেয়।